সংকোচিত বাজেটেই বড় পরিকল্পনা: বাজেটোত্তর ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ৩ জুন, ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
সংকোচিত বাজেটেই বড় পরিকল্পনা: বাজেটোত্তর ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পেশ করা এই বাজেটের উদ্দেশ্য হলো—দেশের মানুষকে স্বচ্ছ জীবনযাপন, উন্নত জীবনমান ও অধিক সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। এর আগের দিন, অর্থাৎ সোমবার (২ জুন) তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন বিটিভিসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট উপস্থাপন করেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা এমন এক সময়ে বাজেট পেশ করেছি, যখন দেশের অর্থনীতিকে বলা যায় ‘আইসিইউ’-তে রাখার মতো অবস্থা। আমরা সংসদ না থাকা অবস্থায় জাতির সামনে বাজেট দিয়েছি। ক্ষমতা গ্রহণ করিনি, দায়িত্ব নিয়েছি। এ কারণে জাতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল হলেও এ বাজেটের মাধ্যমে সরকার একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়। তিনি বলেন, “সবাই যদি কোলাবোরেটিভ ও সিমপ্যাথেটিক হয়ে কাজ করেন, তাহলে আমরা সফল হতে পারবো। এই বাজেটের মূল নির্যাস হলো—সবার জীবনযাপন স্বচ্ছ করা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং জীবনমান উন্নত করা।”

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন, প্রস্তাবিত বাজেট একেবারে বিপ্লবী কিছু নয়। অনেকেই বলছেন এটি আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তবে তিনি এও বলেন, “বাজেটে একেবারে যে ইনোভেশন নেই, তা নয়। হুট করেই বিপ্লবী বাজেট দেয়া সম্ভব নয়। এই বাজেটটি ওপেন থাকবে। কিছু সাজেশন আসবে। পরবর্তীতে ফাইনাল বাজেট প্রকাশ করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের সামনে পথ কঠিন। আমরা এনবিআরকে পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে দেশের বাইরে থেকে ঋণ আনার প্রক্রিয়াও মোটামুটি নেগোশিয়েট করে ফেলেছি।”

এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা, যখন প্রস্তাবিত বাজেটের আকার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম রাখা হয়েছে।

এই হ্রাসকৃত বাজেটের মধ্য দিয়ে সরকার একটি সংকেত দিচ্ছে যে, তারা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়েই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস এবং খরচের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতিফলন ঘটেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এবং অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার।

এছাড়া আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন, যারা বাজেট বাস্তবায়নে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে