‘ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব’—সংকটকালীন বাজেটের ব্যাখ্যায় অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ৩ জুন, ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম
‘ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব’—সংকটকালীন বাজেটের ব্যাখ্যায় অর্থ উপদেষ্টা

জাতীয় সংসদ না থাকা সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেননি, বরং এক কঠিন সময়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে নিয়েছি। দেশ এক প্রকার আইসিইউতে ছিল, আর্থিক ব্যবস্থাপনা ছিল খাদের কিনারায়। সেই সময় আমরা দায়িত্ব না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো।’

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বাজেট উত্থাপনের একদিন পর এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সরকারের অন্য উপদেষ্টা ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানগণ।

সংবাদ সম্মেলনে শুরুতেই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় সংসদ না থাকায় আমরা জাতির সামনে বাজেট উপস্থাপন করেছি। কারণ, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাষ্ট্রপতি ইতোমধ্যে অর্থ বিলে সই করেছেন।”

তিনি বলেন, বাজেটটি তৈরি করতে হয়েছে জ্বালানি ও ব্যাংক খাতের সমস্যা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং দুর্বল রাজস্ব আদায়ের মতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে। “কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে বাজেট করিনি। এটাই প্রথমবার, যেখানে বাজেটের আকার বাড়ানো হয়নি,” জানান তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে যেমন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন, তেমনি বিতর্কিত কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে খোলাখুলি স্বীকারোক্তিও এসেছে অর্থ উপদেষ্টার মুখে। তিনি বলেন, “কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে খুব ভালো কিছু করেছি—এটা বলছি না। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যদিও তার বিপরীতে কর দিতে হবে পাঁচ গুণ বেশি। এই পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব সিপিডি ও টিআইবির মতো সংস্থাগুলো, যাদের ভাষায় এটি ‘বৈষম্যমূলক’, ‘অনৈতিক’ এবং ‘সংবিধান পরিপন্থি’।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে পারলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হত না। কিন্তু যারা পাচার করে, তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমান, লেয়ারিং করে টাকা পাঠায়। এগুলো শনাক্তে সময় লাগবে।” তিনি জানান, ১২টি উল্লেখযোগ্য মামলা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

বাজেটের কাঠামো প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “অনেকে বলেছেন, আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে চট করে বিপ্লবী বাজেট দেওয়া সম্ভব না। সাহসী পদক্ষেপ কিছু আছে, আবার আর্থিক শৃঙ্খলা আনার চেষ্টাও আছে।”

তিনি জানান, বাজেট খসড়াটি এখনো উন্মুক্ত এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে আসা পরামর্শ অনুযায়ী কিছু সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সরাসরি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা এত দিন প্রবৃদ্ধির বয়ান শুনেছেন। কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির সুবিধা পেয়েছে কারা? আমরা চেষ্টা করছি বাস্তবতার আলোকে জনমানুষ ও ব্যবসার উপযোগী বাজেট দিতে। আপনাদের সহযোগিতা চাই। বাইরে গিয়ে দেশের নেতিবাচক ছবি তুলে ধরলে আমাদেরই ব্যাখ্যা দিতে হয়।”

বাজেটের প্রতিপাদ্য হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন—মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বর্ধন এবং অর্থনীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছি। পরে যারা আসবে, তারা হয়তো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু আমরা আমাদের অংশটুকু করেই যাচ্ছি।”

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে