পরিবারের সবাই মিলে অতি যত্নে লালন-পালন করা কৃষক সোহাগ মৃধার ষাড়টির ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি। পা থেকে মাথা অবধি কুচকুচে কালো হওয়ায় ষাড়টিকে সবাই কালো মানিক বলেই ডাকে।গত বছর এর দরদাম হয়েছিলো ১০ লাখ টাকা তিনি বিক্রি করেননি বছর ঘুরে ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাড়টি আরো বড় সড়ো হয়ে লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার হয়তো ১৪/১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে কিন্তু বিক্রির জন্য ষাড়টি বাজারে তুলবেন না সোহাগ মৃধা ।
তার শখের ষাড়টি ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপহার দিতে চান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে । আদৌ ষাড়টি উপহার হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছেতে পারবেন কিনা, বেগম খালেদা জিয়া কৃষক সোহাগ মৃধার উপহার গ্রহণ করবেন কিনা ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও ষাড়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হবেন সোহাগ মৃধা। এজন্য চলছে নানা রকম প্রস্তুতি। ৬০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছে দুটি মিনি ট্রাক, বাদক দল এবং সফর সঙ্গী যারা থাকবেন (এলাকার যুবকরা) তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ গেন্জি, ব্যানার,সংগ্রহ করা হয়েছে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ। আনন্দ উৎসবে চলছে গরুটিকে সাজানোর প্রস্তুতি। সোহাগ মৃধার কালো মানিককে এক নজর দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভীড় করেন দুর দুরান্তের মানুষ।
কৃষক সোহাগ মৃধার বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির একজন কর্মী। তার অদম্য ইচ্ছা শখের ষাড়টি প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেয়া। আওয়ামীলীগ শাসনামলে ২০২৩ সালে সংবাদ মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেয়ার খবর দেখে তার ইচ্ছে জেগেছিল যদি কখনো সুযোগ হয় তার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও তিনি তার শখের ষাড়টি উপহার দিবেন।
সোহাগ মৃধা ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সোহাগ মৃধা ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান গাভী কিনে লালন পালন করেন। সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাভী গরুটি বেশ বড় সড় একটি বকনা বাছুরের জন্ম দেয়। পরে গাভী গরুটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন আর বাছুরটিকে দেশীয় খাবার ভুসি,খৈল, সবুজ ঘাস, খড় কুটা খাইয়ে পরিবারের সকলে মিলে অতি যত্নে ৬ বছর যাবত লালনপালন করছেন সোহাগ মৃধা। মায়া মমতায় ষাড়টি ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছে। কালো কুচকুচে ষাড়টির নাম দেয়া হয়েছে কালো মানিক। এটি লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি আর ওজনে প্রায় ১৪০০ কেজি হবে।
ষাড়টি বিক্রি করার ইচ্ছে সোহাগ মৃধার নেই। তিনি ষাড়টি ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিতে চান। তার প্রত্যাশা ষাড়টি বেগম খালেদা জিয়া গ্রহণ করবেন।
সেই লক্ষে ষাড়টিকে সাজিয়ে গুছিয়ে ঢাকা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ মৃধা বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বাড়িতে মা এবং স্ত্রী এবং দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের সহায়তায় একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় লালন পালন করছেন ৬ বছর ধরে। ষাড়টি বেশ বড় হয়েছে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন সুযোগ পেলে ষাড়টি তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দিবেন। প্রথম দিকে তার আবেগের কথা স্থানীয়দের বিশ্বাস হয়নি। কিন্ত সে নাছোড়বান্দা। ষাড়টি উপহার দেয়ার জন্য কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা রওয়ানা হবেন। শুনেছি সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেয়ার খবর দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
সোহাগ মৃধার মা হাজেরা বেগম বলেন, "ওর যখন যা মন চায় তাই করে। অনেকদিন আগে থেকে ও বলে আসছে ষাড়টি উপহার দিবেন বেগম খালেদাজিয়াকে। ওর বাবা নেই। সামান্য জমি চাষাবাদ করে সংসারের খরচ চলে। খেয়ে পড়ে কোন রকম দিন চলে যায় আমাদের। ছোট বেলা থেকেই ও বিএনপি দলকে ভালোবাসে। বিএনপির বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ গ্রহণ করে।
সোহাগ মৃধার স্ত্রী সুলতানা আক্তার পলি বলেন, কালো মানিক (ষাড়) আর আমার ছোট ছেলে একই বয়সের। ওদের একই রকম স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করেছি। ওর বাবার ইচ্ছে সে তার প্রিয় নেত্রীকে ষাড়টি উপহার দিবেন।
শনিবার সরেজমিনে সোহাগ মৃধার বাড়িতে গিয়ে দেখাগেছে, বিশাল দেহের অধিকারী কুচকুচে কালো রঙের ষাড়টিকে সোহাগ মৃধা তার ছোট্ট শিশু সন্তান জিসান,জান্নাতি ও স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই মিলে সেবাযত্ন করছেন। বাড়িতে কালো মানিককে দেখতে উৎসুক মানুষের ভীড় জমিয়েছেন।
এ সময়ে সোহাগ মৃধা বলেন, আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন। আমিও বিএনপিকে ভালোবাসি। ভাইরাল হওয়ার জন্য না। আমার আবেগ থেকেই প্রিয় নেত্রীকে আমার প্রিয় কালো মানিককে উপহার দিতে চাই। এতে লাভ লোকসানের কিছু নেই।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: সাহাবুদ্দিন নান্নু এ ব্যাপার বলেন, বিএনপির কর্মী সোহাগ মৃধা দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার হিসেবে ষাড় উপহার দেয়ার বিষয়ে আলাপ করেনি। এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই তার।