অনুমতির মেয়াদ শেষ তবুও

মেহেরপুরে বানিজ্য মেলার নামে চলছে জুয়া

এফএনএস (ফারুক আহমেদ, মেহেরপুর) : : | প্রকাশ: ১০ জুন, ২০২৫, ১২:২২ পিএম
মেহেরপুরে বানিজ্য মেলার নামে চলছে জুয়া

মেহেরপুরে প্রশাসনের নাকের ডগায় কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে চলছে রমরমা জুয়া। গত (৩ জুন) মঙ্গলবার মেহেরপুর নতুন বাস টর্মিনালে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এই মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলা উদ্বোধনের পর থেকে অবৈধভাবে প্রতিদিন লাটারি টিকিট বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও সরকারকে ভ্যাট আয়কর কিছুই দিচ্ছেনা আয়োজকরা। অথচ এসব লটারি কিনে প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, সোনা সহ ছোট-বড় নানা পুরস্কারের চটকদার বিজ্ঞাপনে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হচ্ছে। তবে এসব লটারির লাভের অংশ পৌছে যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী সহ সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের কাছে। একারনে অনেটাই চুপ রয়েছে তারা।

জানা গেছে, স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নেওয়া এই মেলায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শর্ত জুড়ে দিয়ে শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু শর্ত লঙ্ঘন করে মেলার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেহেরপুরে মেলার নামে শুরু হয়েছে লটারির জুয়ার ড্র। জেলার সব অঞ্চলে ইজিবাইকের মাইকিং করে লোভনীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে টিকিট কাটা হচ্ছে। প্রতিদিন অবৈধ লটারী জুয়ার নামে গ্রামের খেটে-খাওয়া মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন মাইকিং করে প্রলোভন দেখিয়ে ১০২টি বাক্সের মাধ্যমে টিকিট কাটা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে। মেলার নামে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। 

এছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বাড়ছে এছাড়া ছিনতাই চুরি ও ইভটিজিং এর ঘটনা ঘটেছে এতে আইনশৃংক্ষলার অবনতি হচ্ছে।

লটারির এই নেশায় ধরেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও। অপরদিকে পুরস্কারের লোভে সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। অভাব অনটন লেগে আছে সংসারে এনিয়ে পারিবারিক বিরোধ দিন দিন বেড়েইে চলেছে।

রাত ১১টা বাজলেই বই-খাতা রেখে মোবাইল কিংবা ডিস ক্যাবল টিভি সেটের সামনে বসে পড়ে শিক্ষার্থীসহ খেটে খাওয়া মানুষ। একেকজনে ১০ থেকে ১শত টিকিটও ক্রয় করলেও ভাগ্যে জোটেনি একটি পুরস্কারও। প্রকাশ্যে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব ভুমিকা পালন করছে। 

কাজিপুর গ্রামের রাহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, বামন্দী বাজারে মাইকিং করে লটারির টিকিট বিক্রি করছে মোটরসাইকেল পাবো এমন আশায় ২০টি টিকিট ক্রয় করলেও কোন পুরুস্কার পাননি তিনি। 

মহাজনপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থী মাসুম আলী জানান,মোটরসাইকেল পাবো এমন আশায় মায়ের কাছ থেকে ১শত টাকা নিয়ে লাটারি কিনেছেন। কিন্তু কিছুই পাননি তিনি। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০ টাকা দিয়ে মেলার মাঠে প্রবেশ করতে হচ্ছে। এছাড়া লটারির পাশাপাশি,সার্কাসের নামে অশালিন নৃত্য,হাউজি সহ অবৈধ কর্মকান্ড চলছে। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে মেলার আয়োজক স্বপ্নচূড়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি আশিকুর রহমান শিশিরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

এদিকে মেলা ঘিরে জনসমাগম ঘটনায় করোনা সংক্রামন বৃদ্ধির আশংখা স্বাস্থ্য বিভাগের। করোনা ভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ৪ জুন সতর্কতামূলক মুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ডা: অধ্যাপক হালিমুর রশিদ স্বাক্ষরিত বার্তা দিয়েছে।

মেহেরপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এ,কে,এম, আবু সাঈদ বলেন, সমপ্রতি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মেহেরপুর শিল্প বাণিজ্য মেলায় অনেক মানুষের সমাগম হয় সে ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাক্স পরা উচিত হবে। 

মেহেরপুরের রাজস্ব কর্মকর্তা তানজিদ খান বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ রাজস্ব দিচ্ছে কি না বিষয়টা আমার জানা নেই অফিস খুললে খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারবো। 

মেহেরপুর পৌর প্রশাসক তরিকুল ইসলাম বলেন, মেলা কর্তৃপক্ষ পৌরসভায় কোন আবেদন করেনি আর পৌরসভা কোন অনুমতিও দেয়নি। তবে অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে প্রশাসক ব্যবস্থা নিলে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা করা হবে। 

মেহেরপুর জজ কোর্টের পিপি সাইদুর রহমান রাজ্জাক বলেন,হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে ২রা মে থেকে ২রা জুন পর্যন্ত মেলার অনুমতি দিয়েছে। অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে। 

এদিকে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে মেলার নামে নানা অবৈধ কর্মকান্ড চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেওয়ায় সমালোচনা শুরু হয়েছে। 

মেহেরেপুরের সমাজ সেবক আব্দুর রশিদ বলেন,হাইকোর্ট ১ মাসের জন্য বানিজ্য মেলা করতে বলেছে লটারি,জুয়া সহ অনৈতিক কাজ করতে বলেনি। তারপরও মেলার অনুমতি সময় শেষ হয়েছে প্রশাসনের নাকের ঢগায় কিভাবে চলছে মেলা এ বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। 

জাতীয় নাগরিক পার্টিও কেন্দ্রীয় যুগ্ন সমন্নয়ক ও মেহেরপুর জেলার সংগঠক এডভোকেট শাকিল আহমেদ বলেন,মেলার নামে অনৈতিক কর্মকান্ড গ্রহনযোগ্য নয়। আমরা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুনেরাধ করেছি। আমরা সুন্দর সমাজ গড়তে চাই। মেলার অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে এনসিপির কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

মেহেরপুর শিল্প ও বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বকুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি গ্রহন (রিসিভ) করেনি। বিষয়টি নিয়ে জানতে মেহেরপুরের পুলিশ সুপার মাকসুদা খানমের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। 

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, শর্তসাপেক্ষে মেহেরপুরের শিল্প বাণিজ্যমেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। শর্ত লংঘন করে লটারি সহ অবৈধ কোন কিছু হলে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে