গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নূর বলেছেন, “বর্তমান সরকার মাত্র দশ মাসেই সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। আমরা শুরুতেই বলেছিলাম-দুই বছরের জন্য জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠন করুন। কিন্তু এখন কিছু বলার নেই, শুধু বলছি-এই পর্যন্তই থাকেন, নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।”
বুধবার (১১ জুন) বিকালে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভিপি নূর বলেন, “একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকারই আসুক-তা বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার কিংবা ইসলামী আন্দোলনের হোক-যদি তারা অন্যায় করে, জুলুম চালায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চলবে। অন্তত একটি নির্বাচিত সরকার দরকার। কারণ নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসে না, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন সম্ভব না, বিনিয়োগও আসে না।”
ছাত্র রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছাত্র রাজনীতি মানে শুধু মিছিল-মিটিং করা কিংবা ১০-১২ জন মিলে আড্ডা দেওয়া নয়। ছাত্র অধিকার পরিষদের রাজনীতিতে থাকতে হবে সৃজনশীলতা। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই হবে মূল লক্ষ্য। দেড় দশকের এক ফ্যাসিস্ট শাসনকে এই দেশের তরুণরাই হটিয়েছে। এবার আগামীর বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রদের সংগঠিত, সৃজনশীল ও সংগ্রামী হতে হবে।”
মাদকবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে ভিপি নূর বলেন, “বর্তমান তরুণ সমাজ মাদকের ভয়াবহ থাবায় বিপর্যস্ত। ছাত্র অধিকার পরিষদকে এই বিষাক্ত প্রবণতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ ছাত্ররা পবিত্র, তারা এত কুটিলতা ও জটিলতার মধ্যে ঢ়ুকে যেতে পারে না। এজন্যই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের অধিকাংশই ছিল তরুণ।”
সম্প্রতি এনসিপি নেতা সার্জিস আলমের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদ যদি আবারও জনগণের উপর চেপে বসে, ভোটাধিকার কেড়ে নিতে চায়, তাহলে অভ্যুত্থান বারবার ফিরে আসবে। তবে আমরা আর সেই রক্তের রাজনীতি চাই না, চাই না প্রাণহানি বা সংঘাত।”
ভিপি নূর আরও বলেন, “বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে যত অভ্যুত্থান হয়েছে, প্রতিটিতে তরুণদের অংশগ্রহণ ও ত্যাগ ছিল অনস্বীকার্য। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি নাগরিক তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে। থাকবে স্বাধীন বিচার বিভাগ, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো প্রশাসন।”
নুর বলেন, ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলন না করলে, ছাত্র-জনতা তাজা প্রাণ না দিলে এই জুলাই ২৪-এর জন্ম হতো না, তাই ছাত্রদের নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামীতে সুন্দর রাষ্ট্র বিনির্মাণ হবে। আমরা আর কোনো তাজা প্রাণ রাজপথে বিলিয়ে দিতে চাই না। গণঅধিকার পরিষদ দল কোনো লেজুড়বৃত্তি করে দল গঠন করে রাজপথে আসেনি।
তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কোনো একটি দলের নেতাকর্মীদের লেজুড়বৃত্তি না করে নাগরিকদের সেবা প্রদান করার অনুরোধ জানান। তা না হলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলাম ওই অফিসারের পদত্যাগের দাবিতে অফিস ঘেরাও করার।
গলাচিপা অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গলাচিপা উপজেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আরিফ বিল্লাহ। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক তাওহীদ ইমরান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন-গণঅধিকার পরিষদের পটুয়াখালী জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. মহসিন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল মাহমুদসহ উপজেলা গণ অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।