যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেস অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে ছয় দিন ধরে অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শহরটিতে টানা দ্বিতীয় রাত কারফিউ জারি করা হয়েছে। অভিবাসনবিরোধী আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) অভিযানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং এর ফলে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন শত শত মানুষ।
বুধবার (১১ জুন) স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের নির্দিষ্ট কিছু অংশে কারফিউ কার্যকর করা হয়। তার আগেই সিটি হলের সামনের বিক্ষোভকে “অবৈধ সমাবেশ” ঘোষণা করে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও অশ্বারোহী পুলিশের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। সিএনএন সূত্রে জানা যায়, ওই রাতেই ২০ থেকে ৩০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়।
শহরের মেয়র ক্যারেন বাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ কারফিউ জারির কথা জানিয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্টের তৈরি করা বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেওয়া দুষ্কৃতকারীদের থামাতেই এই সিদ্ধান্ত।” তিনি শহরবাসীকে ডাউনটাউন এলএ অঞ্চল এড়িয়ে চলার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মানার আহ্বান জানান।
শহরটিতে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৩০ জনই কাগজপত্রহীন অভিবাসী। আর ১৫৭ জনের বিরুদ্ধে সহিংসতা, হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, অন্তত দুইজন ব্যক্তি পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে মলোটোভ ককটেল ছুঁড়েছেন এবং একজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অবস্থার অবনতি ঠেকাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা ও ৭০০ মেরিন সেনা। ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের পুলিশ গ্রেপ্তার কার্যক্রমের আগে সন্দেহভাজনদের আটকে রাখার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতিকে সরাসরি দায়ী করেছেন মেয়র বাস। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সপ্তাহখানেক আগেও শহর শান্ত ছিল। কিন্তু শুক্রবার অভিযান শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে।” তিনি আরও দাবি করেন, এটি মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব করার একটি জাতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা।
বিক্ষোভ শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসে সীমাবদ্ধ নেই। আইসিই-এর ছয়টি অঙ্গরাজ্যে পরিচালিত অভিযানের প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্ক, শিকাগো, সান অ্যান্টোনিও, হিউস্টন, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া, লাস ভেগাসসহ বহু শহরেও অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভ ও গ্রেপ্তারের চিত্র:
১. জর্জিয়া: ব্রুকহ্যাভেনে ছয়জন গ্রেপ্তার।
২. ইলিনয়: শিকাগোয় ১৭ জন আটক।
৩. টেক্সাস: রাজ্যজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, হিউস্টনের মেয়রের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান।
৪. নিউইয়র্ক: ফোলি স্কয়ারে ২০০ বিক্ষোভকারী জড়ো; কিছু গ্রেপ্তার।
৫. কলোরাডো: ডেনভারের মেয়র জানান, “প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ চলছে।”
৬. ইন্ডিয়ানা: এনবিএ ফাইনালের শহরেও বিক্ষোভ।
৭. অন্যান্য: বোস্টন, সিয়াটল, মিলওয়াকি, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বহু শহরে বিক্ষোভ।
ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা। এই অভিবাসন নীতি বাস্তবায়নের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে বলে দাবি হোয়াইট হাউসের। যদিও অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অভিবাসন নীতিতে জনসমর্থন থাকলেও ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গ্রহণযোগ্যতা কম।
এমন সময়েই সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এ অভিযান ও সামরিক মোতায়েনের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটি ইচ্ছাকৃত উস্কানি, গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আঘাত।” একইসুরে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম বলেন, “গণতন্ত্র এখন আমাদের চোখের সামনেই আক্রান্ত হচ্ছে।”