বিদেশে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ‘গণআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’: এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৩ জুন, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
বিদেশে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ‘গণআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’: এনসিপির

বিদেশের মাটিতে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা দেশের গণআকাঙ্ক্ষা ও শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননাকর— এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। শুক্রবার (১৩ জুন) ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে দেশের মাটিতে, বিদেশি হোটেলে নয়।

সংবাদ সম্মেলনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দাবি করেন, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জনগণের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বরং এই ধরনের বৈঠককে তিনি ’গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী’ বলেও আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, “লন্ডনে বসে সরকারের সঙ্গে একটি দলের মিটিং শহীদদের রক্ত ও গণআকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এমন বৈঠক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জনগণের পক্ষে নতুন একটি সামাজিক চুক্তির প্রয়োজন, যা হবে গণভিত্তিক—not কোনো দলের সুবিধা অনুযায়ী।”

এনসিপির এই নেতা জানান, যদি সরকার কাঠামোগত সংস্কার, ন্যায়ের বিচার ও সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দল দ্বিতীয় গণঅভ্যুত্থানের দিকে যেতে বাধ্য হবে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “শুধু রাজা বা রানী বদল নয়— কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়।”

নাসীরুদ্দীন আরও বলেন, “সরকার ও বিএনপি মিলেই জনগণকে পাশ কাটিয়ে একটি সংকট তৈরি করছে। শুধু ভোট আয়োজন নয়, দরকার সঠিক বিচার ও সাংবিধানিক সংস্কার। এখনকার নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়, বরং একটি বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির প্রতিনিধি।”

তিনি অভিযোগ করেন, “একটি রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত শহীদদের আত্মত্যাগকে উপহাস করার সামিল। এতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে।”

এনসিপির অন্যান্য নেতারাও সরকারের পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “শহীদ পরিবারগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা অশনি সংকেত।”

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট রূপরেখা না দিয়েই সরকার গণভোট বাতিল করেছে— যা জনগণের মতামতের অবমূল্যায়ন।”

এদিকে লন্ডনে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “বৈঠকের মাধ্যমে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।” বৈঠকের পরে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রয়েছে এবং তা রমজানের আগের সপ্তাহেও হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে এনসিপি মনে করে, সরকার ও বিরোধী দল মিলে জনবিচ্ছিন্ন সমঝোতায় এগোচ্ছে, যেখানে জনগণের কোনো মতামতের প্রতিফলন নেই। দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, সংস্কার ও বিচার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে