এস আলম গ্রুপের ১৮০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
এস আলম গ্রুপের ১৮০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের নির্দেশ

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলার প্রেক্ষিতে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ২০০ দশমিক ২৬ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এই আদেশ দেন। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত জানায়, এই সম্পদ হস্তান্তর হলে তা পরবর্তীতে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক তাহসিন মুনাবিল হক আবেদনে উল্লেখ করেন, মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তাঁর স্ত্রী নানা নামে-বেনামে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাতের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে এবং এজন্য একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, এবারের জব্দ করা সম্পদের দলিলমূল্য প্রায় ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জরুরি ভিত্তিতে জব্দ করতে বলা হয়েছে, যাতে সেগুলো হস্তান্তর, স্থানান্তর কিংবা বেহাত না হয়।

এ নিয়ে চলতি বছর ও গত বছরের বিভিন্ন সময়ে এস আলম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে একাধিক সম্পদ, ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার জব্দ এবং অবরুদ্ধ করেছে আদালত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

২৩ ফেব্রুয়ারি: ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ।

১৪ জানুয়ারি: রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকায় ২০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৬৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ।

৯ এপ্রিল: ৯০ বিঘা জমি জব্দ ও ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ।

২৫ মার্চ: সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের, যেখানে সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে ৭৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ৭৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয়।

দুদকের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সাইফুল আলম পরিবার অর্থ পাচারের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

এসব তদন্তের অগ্রগতির প্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত মোহাম্মদ সাইফুল আলম, তাঁর স্ত্রী, সন্তান ও ভাইসহ ১৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

দুদকের অনুসন্ধান গতি পায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই সময়ে সরকারের প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে এস আলম গ্রুপ ব্যাংক খাতে প্রভাব বিস্তার করে বলে তদন্তে উঠে আসে।

দুদক বলছে, এসব অনিয়মের মাধ্যমে সাইফুল আলম পরিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এই অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে এবং সম্পদের ক্রমাগত জব্দ ও অবরোধের মাধ্যমে তদন্ত আরও জোরদার করা হচ্ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে