নয় বছর পর হলি আর্টিজান হামলার রায় প্রকাশ, সাত আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৮ জুন, ২০২৫, ১২:৪৪ পিএম
নয় বছর পর হলি আর্টিজান হামলার রায় প্রকাশ, সাত আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলা শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ওই রাতে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ২২ জনকে। হত্যাকাণ্ডটি ছিল এতটাই নৃশংস ও বর্বর যে তা দেশের ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত হয়। প্রায় নয় বছর পর এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট, যেখানে সাত আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) হাইকোর্টের দেওয়া ২২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর এই রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ে বলা হয়, শুধু আজীবন কারাবাস নয়, বরং আমৃত্যু কারাদণ্ডই এমন অপরাধের জন্য ন্যায্য এবং যথোপযুক্ত শাস্তি।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, এই হামলা ছিল নির্মম, জঘন্য ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আসামিরা হামলার পরিকল্পনা, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ, প্রশিক্ষণ এবং হামলাকারী নির্বাচন—প্রতিটি ধাপে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাই এ মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(আ) ও ৬(২)(আ) ধারা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়।

আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামি হলেন:

১. রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান

২. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী

৩. আসলাম হোসেন ওরফে র‌্যাশ

৪. হাদিসুর রহমান

৫. আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ

৬. মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন

৭. শরিফুল ইসলাম খালেদ

এর আগে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা দেশি-বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন:

৯ জন ইতালীয় নাগরিক

৭ জন জাপানি নাগরিক

১ জন ভারতীয় নাগরিক

৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক

অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা বোমা হামলায় নিহত হন। হামলাকারীরা ছিল নিষিদ্ধঘোষিত ‘নব্য জেএমবি’ সংগঠনের সদস্য।

হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামিরা যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এটি ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যে কারণে তাদের প্রতি ‘বিশেষ সহানুভূতি প্রদর্শন’ যুক্তিযুক্ত নয়। এ রায় শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়, বরং ভবিষ্যতে এমন অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবেও কাজ করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে