আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় আর ব্যবহার করা যাবে না পোস্টার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) আয়োজিত সপ্তম কমিশন সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য প্রণীত আচরণবিধির খসড়ায় পোস্টার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে প্রথমবারের মতো প্রচারণায় বিলবোর্ড ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ২০২৫ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারপদ্ধতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা। এখন থেকে প্রার্থীরা শুধুমাত্র ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, লিফলেট, হ্যান্ডবিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী এবং কমিশনের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় আমরা পোস্টার বাদ দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছি।”
প্রার্থীদের জন্য এখন থেকে বিলবোর্ডের ব্যবহার অনুমোদিত হলেও, এটি আগে অনুমোদিত ছিল না। অপরদিকে, কমন প্ল্যাটফর্ম থেকে সব প্রার্থীকে একসাথে ইশতেহার পাঠের সুযোগ দেওয়ার বিধান সংযোজন করা হয়েছে। এই ব্যবস্থা পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে। পূর্বে যেখানে সর্বোচ্চ জরিমানার পরিমাণ ছিল ৫০ হাজার টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। একইসঙ্গে ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধানও বহাল রাখা হয়েছে।
আরও যেসব পরিবর্তন এসেছে:
১. উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। তাদের সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২. টিশার্ট ও জ্যাকেট ব্যবহারে পূর্বের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
৩. মাইকে শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল নির্ধারণ করা হয়েছে।
৪. প্রচারণার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন সপ্তাহ।
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকা প্রার্থীদের পদত্যাগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর।
৬. দেশীয় অস্ত্র–কে অস্ত্রের সংজ্ঞায় যুক্ত করা হয়েছে।
৭. সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারে বিদেশি অর্থায়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৮. পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আচরণবিধির এই খসড়া এখনো চূড়ান্ত নয়। এটি কার্যকর হতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আরপিও সংশোধনের ওপর এই বিধিমালার বাস্তবায়ন নির্ভর করবে। ফলে কমিশনের ওয়েবসাইটে নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে বিধিমালা প্রকাশ করা হলেও তা ‘আরপিও সংশোধন সাপেক্ষে’ বলে উল্লেখ থাকবে।
কোনো বিষয়ে আগে বিধান সংশোধন না করে আচরণবিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার মতো’ কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে সানাউল্লাহ বলেন, “আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করেছি। অনেক বিষয়ে মতামত গ্রহণের প্রয়োজন আছে। আলোচনা চলবে, সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।”