জাতীয় ঐক্যমত্য গঠনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এসব সংলাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো—সব দল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, যদিও এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংলাপ শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি জানান, সংলাপে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে।
অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, "রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিভাবে হবে, সেটি এখনও নির্ধারিত না হলেও সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে বিধান রয়েছে তা পরিবর্তনের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন অপরিহার্য—এই উপলব্ধিতে আমরা পৌঁছেছি।"
তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রস্তাবও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আলোচনা হয়েছে কীভাবে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং তার ভূমিকা কী হবে। এই উচ্চকক্ষে সদস্য সংখ্যা হবে ১০০—এই বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল সম্মত হয়েছে, তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়েও আলোচনা হয়। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, "একই ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দল এই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। তবে বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে।"
আলোচনার ধরন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের আলোচনা হয়েছে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। ভিন্নমত থাকলেও সবাই গুরুত্ব সহকারে মতামত দিচ্ছেন।"
এ সপ্তাহের মধ্যেই যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আবারও আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আলী রীয়াজ। আগামী রোববার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় পরবর্তী সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
যেসব বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি, সেগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব। আর যেগুলোতে একমত হতে পারবো না, সেগুলোও আমরা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবো।"
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান এ উদ্যোগ রাজনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের পাশাপাশি দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা আগামীর রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।