মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সাম্প্রতিক সময়ে এক সংকটজনক পর্বে পৌঁছেছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে সেই চুক্তির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়—যা ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ও ‘বিশেষভাবে বিরক্ত’ ও ‘বিশ্বাসঘাতকতা বোধ’ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের কাছে তার হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েল—দুই পক্ষই এই সমঝোতা ভঙ্গ করেছে। তবে আল জাজিরার মার্কিন সংবাদদাতা ফিল লাভেল জানিয়েছেন, যদিও ট্রাম্প উভয় পক্ষের ওপরই ক্ষুব্ধ ছিলেন, তবে তার অতিরিক্ত ক্ষোভ মূলত ইসরায়েল এবং ব্যক্তিগতভাবে নেতানিয়াহুর দিকেই লক্ষ্য ছিল।
আল জাজিরার বিশ্লেষণ অনুসারে, ট্রাম্পের ‘বিরক্তি’ কেবল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের কারণে নয়, বরং তা নেতানিয়াহুর প্রতি ব্যক্তিগত হতাশার প্রতিফলনও। ফিল লাভেলের ভাষায়, ট্রাম্প মনে করছেন নেতানিয়াহু তাকে কৌশলগতভাবে অন্ধকারে রেখে একটি সুযোগ নষ্ট করেছেন। এ কারণেই তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একধরনের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বোধ করছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুন) ট্রাম্প প্রথমে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেন এবং যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তার সম্মতি আদায় করেন। এরপর ইরানকে রাজি করাতে কাতারের সহায়তা নেন তিনি। কিন্তু ট্রাম্পের এই পরিশ্রমের পরও যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতি এমন সময়ে তৈরি হয়েছে যখন ট্রাম্প ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যাচ্ছেন। এই সম্মেলনে যুদ্ধবিরতি ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা নিয়ে কড়া প্রশ্ন ও চাপের মুখে পড়তে পারেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রভাবশালী শক্তির মধ্যে সহিংসতা থামাতে ব্যর্থ হওয়ায়, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির হঠাৎ ভাঙন আন্তর্জাতিক কূটনীতির মাঠে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে সংঘটিত এই চুক্তি ব্যর্থ হওয়ায় তিনি একদিকে যেমন নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষুব্ধ, অন্যদিকে তেমনি তার নিজের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আসন্ন ন্যাটো সম্মেলনে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনার চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।