জাতীয় সংসদের পাবনার ৫টি আসনের মধ্যে ৪টি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। অপর চারটি আসনে যাদের প্রাথমিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে তারা হলেন-পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়ার একাংশ) আসনে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট একেএম সেলিম রেজা হাবিব,পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন,পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এবং পাবনা-৫ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। নির্ধারিত এলাকায় তাদের নির্বাচনী কাজ করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার এ ঘোষনা দেওয়া হয়।
এদিকে পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে বিএনপি’র প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিন একবারেই অপরিচিত মুখ। এই তিন উপজেলার সাথে কোনদিন তাঁর সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিলো না। সাধারণ মানুষ কিংবা বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা তাঁকে চেনেন না। তিনি সুজানগর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁকে এই আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠণের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কথা বলছেন না স্থানীয় নেতারা। সাধারণ মানুষ কোনভাবেই এই সিদ্ধান্ত মানছেন না। এ আসনের সর্ববৃহৎ উপজেলা চাটমোহর। চাটমোহর উপজেলা থেকে প্রার্থী করার দাবি অনেক দিনের।
কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনকে পাবনা-৩ এ দলের প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে পাবনা-৩ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,‘আমি দলের জন্য কাজ করছি,সব সময় করেছি,সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। দলের সকল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করেছি। এলাকার সবাই জানে,বোঝে। আমার এলাকা ভালো রাখতে সবকিছু করছি। আমার অনুসারী কি পরিমান আছে,তোমরা তা জানো। আমার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ নেই। হঠাৎ করে ঢাকায় ডেকে নিয়ে এ ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা তো আমাকে জানানো হয়নি। আমি পর্যবেক্ষণে আছি।
চাটমোহর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আঃ রহিম কালু বলেন,আমাদেরকে জরুরী ভিত্তিতে কেন্দ্রে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই বৃহস্পতিবার জনাব হাসান জাফির তুহিনকে পাবনা-৩ এ প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তাকে সামনে রেখে দলের সকল কর্মকান্ড পরিচালনার কথা বলা হয়েছে,এটা হাই কমান্ডের নির্দেশ। তিনি বলেন,দল যাকে মনোনয়ন দেবে,তাকে নিয়ে আগামী নির্বাচন করবো। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। দলের সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত।
চাটমোহর পৌর বিএনপি’র সভাপতি আসাদুজ্জামান আরশেদ বললেন,‘দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি না। দল যাকে মনোনয়ন দিবো,তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো,তাঁকে বিজয়ী করার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
এদিকে,কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন পাবনা-৩ এ প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলোচনা-সমালোনার ঝড় বইছে। বিষয়টি সহজভাবে মানছেন না বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠণের কর্মী-সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কয়েকটি উক্তি তুলে ধরা হলো।
ভাঙ্গুড়ার সাংবাদিক ও বিএনপ নেতা সাইফুল ইসলাম খান তার ফেসবুকে লিখেছেন,‘গণেশ উল্টে গেল গণেশ পাল্টে গেল,এক মুহূর্তে নেতারা কোথায় গেল, গণেশ উল্টে গেল গণেশ উল্টে গেল। এর দায়ভার সাধারণ নেতাকর্মীকে বহন করতে হবে। নেতারা হিজলা সাজবে।’
মেহেদী হাসান লিখেছেন,‘আমি মেহেদী হাসান বহিষ্কারের ভয় করি না,আমি খানমরিচ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক,,,মানি না মানবোও না মাসুদ খন্দকারকে ভালো না লাগে (ভাঙ্গুড়া,চাটমোহর,ফরিদপুর) অনেক নেতা আছে, যাকে ভালো লাগে তাঁকে দেন। সুজানগরের মানুষ কখনো আমাদের দুঃখ কষ্ট বেদনা বুঝবে না।’
চাটমোহরের যুবদল নেতা আঃ রাজ্জাক আকাশ লিখেছেন,‘আপসোস! পাবনা-৩ এলাকা কি,শেষ পর্যন্ত এমপি প্রার্থী শুন্য এলাকায় পরিনত হল ? মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধানের নিকট।’
চাটমোহরের সঙ্গীত শিক্ষক ও সাংবাদিক দেওয়ান জামিউল ইসলাম কাবলী তার ফেসবুকে লিখেছেন.‘যোগ্য নেতা কি চাটমোহরে ছিলোনা ?? এ আসন নিয়ে তামাশার শেষ নাই! আল্লাহ ভালো রেখেছেন,রাজনীতি করিনা! সাধারণ হিসাবেই ভালো আছি।’
বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোঃ নজরুল ইসলাম লিখেছেন,‘সম্পর্ক বদলে গেল একটি পলকে....কে আপন কে যে পর হলো রে..।’ ঢাকায় বসবাসরত লেবু খোন্দকার তার ফেসবুকে লিখেছেন,‘পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে নেতা ও জনগণেল কপাল পোড়া’ শামীম কবির নামে একজন লিখেছেন.‘নেতার আধিক্যের বর্ষণে চাটমোহর তলিয়ে গেল,কথা কন,ঠিক না বেঠিক’। চাটমোহর পৌর শ্রমিক দলের সভাপতি এনামুল হক লিখেছেন,‘ধানের শীষের সাথে ছিলাম আছি থাকবো ইনশাআল্লাহ’ মোঃ লোকমান,মতিউর রহমানসহ অন্যরা লিখেছেন,‘পাবনা-৩ নিজেদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায়,কোন ভাড়াটিয়াকে জনগণ মেনে নিবে না,মানবে না-প্রচারে পাবনা-৩ এলাকাবাসী।’
মওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন,‘সুজানগরের মাল মাল চাপানো হলো চাটমোহরে,তবে যদি মন্ত্রীত্ব দেয়,তাহলে ঠিক আছে’ ইমরান আল আতিক লিখেছেন.‘রাজনীতি শিখতে চাও পাবনা যাও’।
এরকম অসংখ্য বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জোড়ালো হচ্ছে। চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানা গেল,তারা বাইরের কোন প্রার্থীকে মানবেনা। এলাকার প্রার্থী তারা চান। এনিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা।