আন্দোলনের মাঝেই

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতাসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ জুন, ২০২৫, ০৬:৫৫ পিএম
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতাসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব খাতের সংস্কারকে কেন্দ্র করে চলমান অচলাবস্থার মধ্যেই বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়া এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনবিআরের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। রোববার (২৯ জুন) এই অনুসন্ধানের কার্যক্রম শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের কর্মকর্তারা।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, অভিযোগ রয়েছে, এনবিআরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দিচ্ছেন। এমনকি নিজেদের আর্থিক লাভের জন্য নির্ধারিত করের অঙ্ক কমিয়ে দিতেন তারা। এতে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক মহাপরিচালক সাফ জানিয়ে দেন যে, কোনো ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে দুদক কাজ করে না। যাচাই-বাছাই করেই অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে এবং এতে সরকারের কোনো চাপ নেই।

যাদের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তারা হলেন- এনবিআরের আয়কর নীতি বিভাগের সদস্য এ কে এম বদিউল আলম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; ঢাকা-৮ কর অঞ্চলের অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা; ঢাকা কর অঞ্চল-১৬–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কণ্ডু এবং বিএসএস কর অ্যাকাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, এ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন করদাতাকে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। অভিযোগ অনুসারে, কিছু করদাতা আগাম বা অতিরিক্ত কর পরিশোধ করলে নিয়ম অনুযায়ী সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ঘুষ ছাড়া সম্ভব হয় না। অনেকে কর ফেরতের ক্ষেত্রে মোট টাকার অর্ধেক পর্যন্ত ঘুষ দিতে বাধ্য হন। এছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে শুল্ক, ভ্যাট ও কর ফাঁকির সুবিধা দিয়ে এবং নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করারও অভিযোগ উঠে এসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকির মিথ্যা মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হয়। আবার দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে দায়িত্ব পালনকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে।

এদিকে, এই ছয় কর্মকর্তার বেশিরভাগই এনবিআরের সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে সংস্কার বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন তারা। আন্দোলনকারীরা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ায় এনবিআরের কর্মকর্তাদের উপেক্ষা করছেন এবং আন্দোলনকারীদের দমন-নিপীড়ন করছেন।

রাজস্ব খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার ১২ মে এক অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—গঠন করেছে। উদ্দেশ্য, কর নীতিনির্ধারণ এবং কর আদায়ের কাজ আলাদা করা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির শর্তের অংশ হিসেবেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মূলত নতুন গঠিত বিভাগগুলোতে পদায়নে নিজেদের অগ্রাধিকার চাইলেও সরকার যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়োগের কথা বলছে।

এই প্রেক্ষাপটে, রোববার (২৯ জুন) সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এনবিআরের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতি ও জনগণের স্বার্থে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে