প্রবাসীর ভালোবাসায় ফলছে স্বপ্নের আম

এফএনএস (জাকির হোসেন; বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ি) : | প্রকাশ: ২৯ জুন, ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম
প্রবাসীর ভালোবাসায় ফলছে স্বপ্নের আম

বিদেশের ব্যস্ততা, কংক্রিটের শহর আর মুদ্রার হিসেব ফেলে ফ্রান্স থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে দেশের মাটিতে ফিরে আসেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা খন্দকার হাসান তারেক সুইট। তার মনে ছিল একটাই স্বপ্ন- শিকড়ের টানে নিজের মাটিতে কিছু করা।

প্রথমে শুধুই শখের বশে লাগিয়েছিলেন কয়েকটি আম গাছ। দিনে দিনে সেই গাছগুলোই হয়ে উঠেছে তার জীবনের অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই শখের বাগান আজ পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক উদ্যেগে। যেখানে দেশের প্রচলিত জাতের পাশাপাশি রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’সহ প্রায় ২৫টি বিদেশী জাতের দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির আম।

সুইট  শোনান তার সফলতা ও আগামীর পরিকল্পনার কথা। ১৯৯১ সালে ঢাকা সিটি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৯২ সালে পাড়ি জমান রাশিয়াতে। সেখান থেকে তিনি যান ফ্রান্স এবং ইতালিতে। ২০০১ সালে ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। দেশে ফিরেই বসে না থেকে পরের বছরই ৩ একর ৭২ শতাংশ জমি কিনে গড়ে তোলেন শামিন এন্ড সাফির ইন্ট্রিগ্রেটেড এগ্রো ফার্ম।

প্রথমেই যাত্রা শুরু করেন ৭ হাজার স্কয়ার ফিটের পোল্ট্রি মুরগীর খামার (যার বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার মরগী উৎপাদন), ১২০০ স্কয়ার ফিটের গরু মোটা তাজাকরণের খামার, মৎস্য চাষ, ছাগল ও হাঁসের খামার দিয়ে। সাথে শখ করে লাগান কয়েকটি আম গাছ। অল্প সময়ের মধ্যে খামারটি সফলতার আলো দেখতে পায়। এরমধ্যে খামারটি সম্প্রসারণ হয়ে দাঁড়ায় ৭ একরে।  

কিন্তু খামারটির ছন্দপতন ঘটে ২০২০ সালে। করোনার প্রভাবে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। ২০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হন তিনি। করোনার প্রভাব কিছুটা কমতে থাকলে আবার শুরু করেন কার্যক্রম। তবে এবার ভিন্নরুপে। শুরু করেন সবজি দিয়ে। এরপর পরিকল্পনা করেন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্গাণিক পদ্ধতিতে (কম্পোস্ট সার) মৎস্য ও কৃষি চাষে ঝুঁকবেন। শুরু হয় সমন্বিত কৃষি খামার। 

বর্তমান খামারে মিশ্র পদ্ধতিতে আম এবং বড়ই চাষের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ বিঘা। বিশাল আকৃতির পুকুর রয়েছে ৪টি। লিচু গাছ রয়েছে ৩০টি। দেশী-বিদেশীসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বিদেশী জাত রয়েছে ১৫ টি। বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম জাপানের মিয়াজাকি, আমেরিকান রেড পালমার, বিশ্ববিখ্যাত ভারতের আলফানসো, লাকনু সফেড, ব্রুনাইয়ের ব্রুনাই কিং, থাইল্যান্ডের কিং অব চাকাপাত, থাই কাঠিমন, থাই বেনানা (মহাচানক), চিয়াং মাই, নিয়াম দকমাই, থাই গ্রীন সুইট, থ্রি টেস্ট ও কিউ জাই রয়েছে তার বাগানে। এছাড়া দেশীয় প্রায় সব প্রজাতির আম গাছই রয়েছে তার বাগানে।

চলতি বছর আমের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০০ মন। ফল মৌসুমের শুরুর দিকে প্রতি মন আম পাইকারি বিক্রি করেছেন ৪০০০ টাকা। এরপর মাঝামাঝিতে বিক্রি হয়েছে প্রতি মন ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আর এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা মন। গড়ে তিনি চলতি বছরে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। অন্যদিকে মৎস্য খামারে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ১০০ মন। 

সুইট বলেন, মৎস্য ও কৃষি খামারে শতভাগ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এখন যা আছে তার দ্বিগুণ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির দাম অধিক হওয়ায় সব প্রযুক্তিই তিনি কিনতে পারেননি। বিশেষ করে ড্রিপ ইরিগেশন, আধুনিক সার প্রয়োগের যন্ত্র, পোকামাকড় দমনের যন্ত্র, মৎস্যের জন্য এরিয়েটর, অক্সিমেটার, ডিএস তার খামারের জন্য খুবই প্রয়োজন। বর্তমান তার প্রায় ২৪ লাখ টাকার ঋণ নেওয়ার রয়েছে। কৃষি বিভাগ যদি তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে তিনি তার এই খামারটিকে একটি মডেল খামার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, এই খামারে সব ধরণের সহযোগিতা করবেন। কৃষি বিভাগ তার পাশে থাকবে। যে সকল আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োজন সে সকল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার চেষ্টা করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে