“সব প্রস্তাবে একমত হতে হবে, তবে আলোচনা কেন?”—বিএনপির সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ জুন, ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
“সব প্রস্তাবে একমত হতে হবে, তবে আলোচনা কেন?”—বিএনপির সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বিএনপি সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা দেখিয়েছে। রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সংবিধানের মূলনীতি, ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ এবং সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব বিরোধী দলের হাতে ন্যস্ত করা- এসব বিষয়ে বিএনপি ঐক্যমতে পৌঁছেছে। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি কমিশনের সব প্রস্তাবেই শতভাগ একমত হতে হয়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন কী ছিল। তার ভাষায়, “আমরা তো অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে গোপন ব্যালটে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার প্রস্তাবেও আমরা একমত হয়েছি। এখন যদি সব প্রস্তাবে একমত হতে বাধ্য করা হয়, তাহলে আলোচনার দরকারই ছিল না।”

এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কমিটি এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে। সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, নিয়োগ কমিটি নিয়ে বিএনপির পূর্বের অবস্থানই বহাল আছে। তিনি বলেন, “আমরা আগেও বলেছি, দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো সংস্থাগুলোর আইনে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী, কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন আমাদের লক্ষ্য।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা জানান, তারা ৩১ দফার যে দলীয় প্রস্তাব দিয়েছিল, সেই প্রস্তাবই পুনরায় উপস্থাপন করেছেন। “আমাদের আন্তরিকতা নিয়েই আমরা জুলাই সনদে সইয়ের জন্য কাজ করছি,” বলেন তিনি। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলটি দ্বিকক্ষের উচ্চকক্ষে ১০০ আসনের পক্ষে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তনের পক্ষে। তবে দেশের স্বার্থে কোনো উত্তম প্রস্তাব এলে বিএনপি তা বিবেচনা করতে রাজি।

অন্যদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চলমান প্রচেষ্টা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টা অবশ্যই স্বাগতযোগ্য। তবে এই প্রচেষ্টা কতটা নমনীয়তার জায়গায় পর্যবসিত হয়েছে, সেটি আমাদের আশঙ্কায় ফেলেছে। মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে যে বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে, সেগুলোতে বিএনপি বা তাদের সঙ্গে থাকা কিছু দল দ্বিমত করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা শেষেও অনেক বিষয় অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে। হাউজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”

এনসিপির এই নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। তবে একমতের জায়গা জোর করে চাপিয়ে দিলে সেটা তো ঐকমত্য নয়। আমরা চাই, যেসব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব, সেগুলোর ভিত্তিতেই সনদ হোক।” তিনি আরও বলেন, “যখন সব দলের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য হবে, তখন সেই বিষয়গুলো একত্রিত করে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হবে।”

সালাহউদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, “আমরা জাতীয় মূলনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জানিয়ে একমত হয়েছি। ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশ ও ভোটের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। বিরোধী দলের কাছে সংসদীয় কমিটির সভাপতিত্ব দেওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছি। এমনকি চারটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি এবং আসনের অনুপাতে বিরোধী দলের কাছে এক-তৃতীয়াংশ কমিটি যাওয়ার প্রস্তাবও আমরা সমর্থন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর করার প্রস্তাবেও আমরা একমত হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “তবে আমাদের শর্ত হচ্ছে, এনসিসির মতো বা সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটির মতো কোনো বিষয় এলে, সেটা আগের প্রস্তাব অনুসারে বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগের মতোই রয়েছে।”

এভাবেই রাজনৈতিক সংস্কার ও রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মতবিরোধ থাকলেও বিএনপি জুলাই সনদ স্বাক্ষরে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক বলে দাবি করেছেন দলটির শীর্ষ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। তবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পূর্ণ ঐক্যমত তৈরি হয়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে