চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘সম্প্রীতির পুকুর’ হিসেবে পরিচিত বরেন্দ্রা সুতিহার দীঘি নামে একটি জলমহালের ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১ টার দিকে নাচোল উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এতে উপজেলার বরেন্দ্রা এলাকার কয়েক শ’ আদিবাসী ও মুসলিম নারী পুরুষ অংশ নেন। পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রায় ঘন্টাব্রাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
বরেন্দ্রা গ্রামর আব্দুল কাদের জেয়ার্দার ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নেতা টুনু পাহান জানান, নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্রা গ্রামের সুতিহার দীঘিটি এলাকার সম্প্রীতির পুকুর’ নামে পরিচিত। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর ধরে এই দীঘিটি বরেন্দ্রা গ্রামের মৎসজীবী সমবায় সমিতির নামে লীজ নেয়া হয়। সেখানে মাছ চাষ করে পাওয়া অর্থে স্থানীয় মসজিদ, মন্দির, গোরস্থান, শ্মশানের উন্নয়ন ও কল্যাণকর কাজে ব্যয় করা হয়। এছাড়াও এলাকার দুস্থ্য রোগিদের চিকিৎসা খরচ, রোগি বহনের অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহনের ভাড়া দেয়া হয়। অস্বচ্ছল মেধাদী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হয়। মুসলিম, হিন্দু ও ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠির অস্বচ্ছল পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এই দীঘিকে ঘিরেই বরেন্দ্রা গ্রামে ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ পেছেনে ফেলে মানুষের মাঝে গড়ে উঠেছে সম্প্রীতির অনন্য নজির। কিন্তু এবার জলমহাল নীতিমালা অমান্য করে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি সমিতিকে দীঘিটি লীজ দেয়া হয়েছে। এতে করে গ্রামের মানুষ ওই দীঘির পানি ব্যবহার করার সুযোগও পাচ্ছেন না। আব্দুল কাদের জেয়ার্দার বলেন, আমরা সম্প্রীতির পুকুরটি রক্ষার আন্দোলনে নেমেছি। আমরা আশা করি পুকুরটিকে ঘিরে ধর্মীয় সম্প্রীতির যে অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে, সেটা বিবেচনা করবে প্রশাসন। পরে দীঘিটির লীজ বাতিল করে বরেন্দ্রা মৎসজীবী সমবায় সমিতির অনুকূলে লীজ দেয়ার দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দেয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার বলেন, উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সভায় সুতিহার দীঘির ইজারামূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয় সর্বসম্মতিক্রমে। পরে এ সংক্রান্ত সুপারিশ পাঠানো হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায়। কিন্তু সেখানে একটি সমিতির পক্ষ থেকে আপীল করা হলে তারা জলমহালটি লীজ পান। তিনি আরও বলেন, সোমবার জেলা প্রশাসক বরেন্দ্রা গ্রামে গিয়ে পুকুরটি পরিদর্শন করেছেন এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।