ভয়াবহ বন্যায় গেলো বছর ভারতের উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানির তোড়ে ফুলগাজীর বৈরাগপুরে কহুয়া নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। ভেসে যায় ঘরবাড়ি, হুমকির মুখে পড়ে বাসিন্দাদের সম্পদ-জীবন। জলমগ্ন ছিল গ্রাম থেকে শহর-গোটা জনপদ। ভয়াবহ সেই দুর্যোগের ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফেনীবাসী। বন্যার দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বাঁধের কাজ। জিও ব্যাগগুলো পড়ে আছে রাস্তার ওপর। গেল কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পরশুরামের বল্লারমুখাসহ বাঁধের ফুলগাজী-পরশুরাম অংশের আরো ৪১টি স্থান। বর্ষাকাল কেবল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে বন্যা কিংবা নদীভাঙনের প্রকোপ। পরশুরাম ফুলগাজীর সিলোনিয়া, কহুয়া ও মুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর পুরো বাঁধটিই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির চাপে যেকোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ না হলে ঝুঁকির মুখে পড়বে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার বাসিন্দা। জানা যায়, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের মেরামতের কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে। ইতিমধ্যে গত বন্যার পর আট মাস পার হয়ে গেলেও মেরামতের কাজ শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্লাবন ও বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করতে হচ্ছে নদীগুলো তীরবর্তী বসবাসকারী ৩০/৪০ হাজার মানুষকে। গেল বছরের বন্যায় ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়ার ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে ১০২টি স্থানে। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে সরকারের ২০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলেও জানিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে গত কয়েকদিন আগে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পুরোনো বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাজিরহাট পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাছির মোহাম্মদ ঘাট ও মালাকারপাড়া এলাকায় ১০ হাজার পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রকল্প হাতে নিলেও নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। ফলে হালদাতীরের বাসিন্দারা বন্যা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বন্যার আঘাত প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে। এর প্রধান কারণ আমাদের নদীগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। তাই নদী খননের মাধ্যমে নদী দিয়ে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।