১৯৬৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক ও নির্যাতন করেছে ইসরায়েল, যা ফিলিস্তিন দখলের নীতির ‘মেরুদণ্ড’ হিসেবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ‘আমেরিকান মুসলিমস ফর প্যালেস্টাইন’ নামের সংস্থা প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৫৮ বছরে প্রতিদিন গড়ে ৪৭ ফিলিস্তিনিকে কারাগারে পাঠিয়েছে ইসরায়েল।
প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করে বলা হয়-‘যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৭০০ মাস ধরে এই দমননীতিকে অর্থায়ন করে আসছে।’
প্রতিবেদনে এক নারী বন্দির সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ফিদা আসাফ নামে এক ফিলিস্তিনি নারীকে কালকিলিয়ার কাফর লাকিফ গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী। চিকিৎসা শেষে রামাল্লাহ থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে অপহরণ করা হয়। পরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানান, আসাফকে একাধিকবার বিবস্ত্র করে তল্লাশি করা হয় এবং তাকে নোংরা ও কীটপতঙ্গে ভরা একটি কক্ষে রাখা হয়। সেখানে তাকে কয়েকদিন ধরে খাবার ও পানি ছাড়াই রাখা হয়েছিল।
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও আসাফ এখনো বেরডেমন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। সেখানে আরও ৪০-এর বেশি নারী বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে গর্ভবতীও আছেন, যেমন জাহরা কাওয়াজবেহ ও দুয়া কাওয়াজবেহ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এদেরকে চরম নির্যাতন ও চিকিৎসা অবহেলার মধ্যে রাখা হয়েছে।
২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ইসরায়েলি কারাগারে মোট ১০ হাজার ৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে বলে জানায় সংস্থাটি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫৫ জন দণ্ডপ্রাপ্ত, ৩ হাজার ১৯০ জন বিচার প্রক্রিয়ার অপেক্ষায় এবং ৩ হাজার ৫৭৭ জন কোনো অভিযোগ ছাড়াই প্রশাসনিকভাবে আটক।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন সেনাঘাঁটি ও বসতি থেকে ২৫১ জনকে আটক করা হয়েছিল। এর মধ্যে ডজনখানেক বন্দিকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়। বর্তমানে হামাসের হাতে ৪৯ জন বন্দি রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে ২৭ জন ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়ে থাকতে পারেন।
এই প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েল শুধু দখলই করেনি, বরং বন্দিত্ব ও কারাব্যবস্থাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। আর সেই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অর্থায়ন বড় ভূমিকা রেখেছে। সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড