জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বরগুনার তালতলি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। একদিকে চিকিৎসক সংকটে রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। অন্যদিকে ল্যাবরেটরী, এক্সরে, ইপিআই, ডেন্টাল, রেডিওগ্রাফি যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ানের অভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
জানা গেছে, তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ট্যান্ডার্ড সেটাপ অনুযায়ী ৪১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখানে রয়েছে মাত্র ২জন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ থাকেন ছুটিতে। যার কারনে নিয়মিতই রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট (ডিপ্লোমা)। ২ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় ঔষধের বরাদ্দ অতি সামান্য। বছরের শেষ দিকে হাসপাতালে বিভিন্ন ঔষধের সংকট দেখা দেয়। সচারাচর ঔষধের মধ্যে নরমাল স্যালাইন ও গ্যাসের ঔষধের সংকট রয়েছে এখানে।
স্ট্যান্ডার্ড সেটাপ অনুযায়ী হাসপাতালটিতে সব মিলিয়ে ১০৫ টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। আয়া ও ঝাড়ুদার না থাকায় হাসপাতালের পরিবেশ খুবই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। আউট সোর্সিং-এ ২জন ক্লিনার ও নাইটগার্ড নিয়োগ দেয়া থাকলেও তত্বাবধানের অভাবে তারাও কাজে ফাকি দিচ্ছে। ড্রাইভার না থাকার কারনে হাসপাতালের নতুন এ্যাম্বুলেন্সটি দিনে দিনে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে কোন ধরনের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা না হওয়ার কারনে বেশি টাকা দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
শনিবার দুপুরে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গিয়ে দেখা গেছে, রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত ফার্মাসিস্ট মোঃ জুয়েল মিয়া। বর্তমানে হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ হলো জ্বরে আক্রান্ত। এদেরকে পাঠানো হয় ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য। সেখানেও হয়রানির শিকার হচ্ছে রোগীরা।
উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের জয়ালভাঙ্গা গ্রামের মোহাম্মদ রুমি জানান, তিন বছরের শিশু মাহিনের জ্বর নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসলে তাকে দেখেন চিকিৎসকের আসনে থাকা ফার্মাসিস্ট মোঃ জুয়েল মিয়া। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তাকে বাইরের যে কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরে তিনি বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনেক টাকা দিয়ে পরীক্ষা করান। যেটা তার জন্য অনেক কষ্টসাধ্য। অনেকেই এ ভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষায় হয়রানি হয়েছেন।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় তিন শতাধিক রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। কিন্তু সাধারন কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হলেই রোগীদের যেতে হচ্ছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বা জেলা সদরে। কখনো কখনো বিভাগীয় শহরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের অনেক নতুন যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয় তালতলী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাক্তার এ.কে.এম মনিরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকট সত্ত্বেও আগের তুলনায় এখানে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হয়েছে। শীঘ্রই গাইনি ও এনেস্থেসিয়া কনসালটেন্ট পেলে এবং এমটি ল্যাব চালু করতে পারলে তালতলী হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান আর একধাপ বাড়বে। এ ব্যাপারে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবুল ফাত্তাহ কে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।