নিভৃত পল্লীর আলোকিত শিক্ষক মধুসূদন সরকার

এফএনএস (জাকির হোসেন; বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ি): | প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
নিভৃত পল্লীর আলোকিত শিক্ষক মধুসূদন সরকার

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নিভৃত গ্রাম বহরপুরের পাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার আবারও প্রমাণ করলেন- প্রকৃত শিক্ষক শুধু পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নন, তিনি জীবনের পাঠও শেখান। জীবনমুখী শিক্ষা একজন মানুষকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাঁচা প্রবেশপথ সংস্কারের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার  শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে ইট-বালু ফেলে চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষার মৌসুম ঘন বৃষ্টির কারনে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে পানি জমে কাদায় পরিণত হয়। এতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। কয়েক জন ছাত্র -ছাত্রী কাদায় পিছলে পড়ে যায় । বিষয়টি চোখে পড়ার পর মধুসূদন সরকার নিজের উদ্যোগে পথ সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজে হাতে কাজের তদারকি করেন এবং বিদ্যালয়ের  কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে ওই কাজ  করেন।

যদিও কেউ কেউ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে সমালোচনা করেছেন। তবে সচেতন মহলের মতে, এটি কোনো শিশু শ্রম নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা ও বাস্তব জীবনের উপলব্ধি থেকে চলার পথ প্রস্তুত করার এক বাস্তব প্রশিক্ষণ।

এ বিষয়ে পাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকার  বলেন, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথটি ঘন বৃষ্টির কারণে কর্দমাক্ত পিচ্ছিল হয়ে যায়।  ছাত্রছাত্রীদের কাদাপানির মধ্যে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়। কয়েকজন ছাত্রছাত্রী কাঁদায় পিছলে পড়েও যায়। তাদের পড়ে যাওয়া দেখে খুব খারাপ লাগছিল।

সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাই নিজের দায়বদ্ধতা থেকে  শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্ঘটনা এড়াতে পথ সংস্কারের কাজ শুরু করি। আমি মনে করি, শুধু পাঠ্যপুস্তকের পাঠ নয়, বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করাও শিক্ষারই অংশ।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক যে মানবিক দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি শুধু একজন শিক্ষকের দায়িত্ববোধের উদাহরণ নয়। বরং সমাজের সবাইকে বার্তা দেওয়া। নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাই এগিয়ে এলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

স্থানীয়রা জানান, স্কুলের প্রবেশপথ দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। শিক্ষক নিজ উদ্যোগে সংস্কার শুরু করায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা দেখছে, তাদের শিক্ষক শুধু কথায় নয়, কাজে দেখাচ্ছেন-সমস্যা দেখলে হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়, বরং নিজে এগিয়ে আসতে হয়।

শিক্ষানুরাগীরা বলছেন, শিক্ষা শুধু পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক নয়, বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই শিক্ষার অংশ। এটাই যেন বাস্তবে দেখালেন মধুসূদন সরকার। এই উদ্যোগে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা দায়িত্ববোধ, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং মানবিক মূল্যবোধের পাঠ পেয়েছে।

পাকালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন সরকারের এমন মানবিক ও সাহসী উদ্যোগ সমাজের সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে প্রসংশা সহ ‘আদর্শ শিক্ষক’ আখ্যা দিয়েছেন। আমরাও বলি, স্যালুট মধুসূদন স্যার, আপনার দায়িত্ববোধ, মানবিকতা এবং বাস্তবমুখী শিক্ষাদানের এই উদ্যোগ আগামী দিনের জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকুক।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে