ফিরে দেখা কিংবদন্তি দিলীপ কুমারের সেরা ছবিগুলো

এফএনএস বিনোদন | প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
ফিরে দেখা কিংবদন্তি দিলীপ কুমারের সেরা ছবিগুলো

বলিউডের ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল অমলিন। সেই অমর নামের তালিকায় শীর্ষস্থানেই আছেন দিলীপ কুমার। ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার হয়ে ওঠা এই অভিনেতা শুধু বলিউডের নয়, সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি ছিলেন। আজ তার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের ৭ জুলাই, ৯৮ বছর বয়সে চিরবিদায় নেন তিনি। দিলীপ কুমারের দীর্ঘ প্রায় ছয় দশকের অভিনয়জীবনে একের পর এক সিনেমা সোনালী অধ্যায় হয়ে আছে হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। এই কিংবদন্তির মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক তাঁর ক্যারিয়ারের কয়েকটি উজ্জ্বল ছবি, যা আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে অম্লান।

১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া আন্দাজ ছবির মাধ্যমে দিলীপ কুমার এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান। নার্গিস এবং রাজ কাপুরের সঙ্গে ত্রিকোণ প্রেমের গল্পে তিনি এমন অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দেন, যা দর্শকের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলে।

এর পরের বছর, ১৯৫০ সালে মুক্তি পায় বাবুল। এই ছবি সেই বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা। মিউজিক্যাল ঘরানার ছবিতে দিলীপ কুমার এক পোস্টমাস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। নার্গিস ও মুনাওয়ার সুলতানার সঙ্গে তাঁর রসায়ন দর্শকদের মুগ্ধ করে।

১৯৫১ সালে দিদার ছবিতে তিনি অভিনয় করেন, যা তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। এই ছবির পর থেকেই তিনি “কিং অব ট্র্যাজেডি” নামে পরিচিতি পান। ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন নার্গিস ও নিম্মি।

১৯৫২ সালের দাগ ছবিটি দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক। পরিচালক অমিয় চক্রবর্তীর এই ছবিতেই প্রথমবারের মতো তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। ছবিতে নিম্মির সঙ্গে তাঁর অভিনয় বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়।

১৯৫৫ সালে মুক্তি পায় দেবদাস, যা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসকে সর্বভারতীয় জনপ্রিয়তা এনে দেয়। বিমল রায়ের পরিচালনায় এই ছবিতে সুচিত্রা সেন ও বৈজয়ন্তীমালার সঙ্গে দিলীপ কুমারের ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি আজও অমর।

১৯৫৭ সালে নয়া দৌড় ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেন টাঙ্গাওয়ালা শংকরের চরিত্রে। এই ছবি তখনকার সমাজ-অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গভীর আবেদন রাখে।

১৯৫৮ সালে মুক্তি পায় কিংবদন্তি মধুমতী। শুধুমাত্র দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারেই নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসেও ছবিটি এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। বিমল রায়ের পরিচালনা, সলিল চৌধুরীর সুর, ঋত্বিক ঘটকের চিত্রনাট্য এবং দিলীপ কুমার ও বৈজয়ন্তীমালার অভিনয় মিলে এই ছবি হয়ে ওঠে অনন্য।

১৯৬০ সালের মুঘল-এ-আজম ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অমর সৃষ্টি। কে আসিফের পরিচালনায় শাহজাদা সেলিমের চরিত্রে দিলীপ কুমার যেমন ঐতিহাসিক চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন, তেমনি ছবির প্রতিটি দৃশ্য হয়ে আছে কালজয়ী।

১৯৬১ সালের গঙ্গা–যমুনা ছবিতে দিলীপ কুমার অভিনয় করেন গঙ্গার চরিত্রে, যিনি এক ডাকাত। তাঁর ভাই যমুনা একজন পুলিশ অফিসার। দিলীপ কুমার ও নাসির খানের ভাই-ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কাহিনি ছবিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। এই গল্পের ছায়ায় পরবর্তী সময়ে তৈরি হয়েছে বহু চলচ্চিত্র।

১৯৬৭ সালের রাম অউর শ্যাম ছবিতে দিলীপ কুমার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করে নতুন মাইলফলক স্থাপন করেন। দুই যমজ ভাইয়ের চরিত্রে তাঁর অনবদ্য অভিনয় চলচ্চিত্রটিকে করে তুলেছিল এক অনন্য বিনোদন। ছবিতে ওয়াহিদা রেহমান ও মুমতাজের উপস্থিতি গল্পকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এই ছবির প্রেরণায় হেমা মালিনীর ‘সীতা অউর গীতা’ কিংবা শ্রীদেবীর ‘চালবাজ’-এর মতো ছবি তৈরি হয়েছে পরে।

প্রায় ছয় দশক জুড়ে অভিনয় করে গেছেন দিলীপ কুমার। প্রতিটি ছবিতেই তিনি যে মুনশিয়ানার ছাপ রেখেছেন, তা বলিউডকে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতা। তাঁর অভিনয়, সংলাপপ্রক্ষেপণ, সংযম এবং আবেগের প্রকাশ আজও পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের কাছে অনুপ্রেরণা। কিংবদন্তি এই অভিনেতা চলে গেছেন চিরতরে, কিন্তু তাঁর সৃষ্টি অমর হয়ে রয়ে গেছে রূপালী পর্দায় ও কোটি ভক্তের হৃদয়ে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে