জাতীয় পার্টির (জাপা) ভেতরে দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হয়েছে সিনিয়র নেতাদের পদচ্যুতির সিদ্ধান্তকে ঘিরে। জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেওয়া অব্যাহতির সিদ্ধান্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দলের তিন শীর্ষ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মো. মুজিবুল হক (চুন্নু)। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের পদে বহাল আছেন এবং দলের কাউন্সিলে অংশ নেবেন।
জি এম কাদের সোমবার (৭ জুলাই) আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার এবং মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন নেতাকে দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন। সেইসঙ্গে শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের নতুন মহাসচিব হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তিন নেতা অভিযোগ করেন, এই অব্যাহতি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে নেওয়া হয়েছে এবং এটি জাপার গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী।
সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জি এম কাদের যে সভা ডেকে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন, সেই সভা তিনি ডাকতে পারেন না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এমন সভা ডাকতে পারেন শুধু মহাসচিব। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ। তিনি বলেন, তাঁরা সবসময় দলের ঐক্যের কথা বলেছেন, কোনো বিরোধিতা করেননি।
তিনি আরও বলেন, জাপার গঠনতন্ত্রে যে ধারা ধরে চেয়ারম্যান এককভাবে কাউকে পদচ্যুত বা বহিষ্কার করতে পারেন, সেটি গণতান্ত্রিক দলের জন্য স্বৈরাচারী ধারা। তিনি দাবি করেন, এই ধারা বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে অভিযোগ করেন, এইচ এম এরশাদ অসুস্থ থাকার সময় জোর করে দলের কো-চেয়ারম্যানের পদ দখল করেছিলেন জি এম কাদের।
মুজিবুল হক বলেন, জি এম কাদের একতরফাভাবে দলের ২৮ জনকে পদোন্নতি দিয়েছেন অথচ তৎকালীন মহাসচিব হিসেবে তিনি কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, তিনি যখন সংসদ সদস্য ছিলেন, তখন জি এম কাদের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার ছিলেন। কেবল এরশাদের ভাই হওয়ার কারণেই তাঁকে চেয়ারম্যানের পদ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মুজিবুল হক। তিনি জানান, তাঁরা জাতীয় পার্টি ছাড়বেন না, ভাঙতেও দেবেন না। তাঁরা কাউন্সিলে অংশ নেবেন এবং সেখানে তাঁদের কথা গ্রহণ না করলে পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনা করবেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার অভিযোগ করেন, তিনি ১৭ বছর জাপার মহাসচিব ছিলেন। কিন্তু একটি ‘শক্তিশালী গোষ্ঠীর’ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাঁদের দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জি এম কাদেরের কর্মকাণ্ড জাতীয় পার্টির ক্ষতি করছে এবং এ ধরনের আচরণ কোনো সুস্থ রাজনীতিবিদের কাজ হতে পারে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, মোস্তফা আল মাহমুদ, নাজমা আকতার, জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া, আরিফুর রহমান খান, জহিরুল ইসলাম জহির, সোলায়মান আলম শেঠসহ আরও অনেক নেতা।
অন্যদিকে দলের অন্দরের সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (৯ জুলাই) জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের এ নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গভীর কৌতূহল তৈরি হয়েছে।