আবরার ফাহাদের দেখানো পথেই রাজনীতি করছে এনসিপি: নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৮ জুলাই, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম | প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২৫, ০৬:১৬ পিএম
আবরার ফাহাদের দেখানো পথেই রাজনীতি করছে এনসিপি: নাহিদ ইসলাম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় আধিপত্য বিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছেন আবরার ফাহাদ। সেই পথেই নিজেদের রাজনীতির মানচিত্র আঁকছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আবরারের দেখানো পথেই ফ্যাসিবাদ ও বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে তাঁদের দল। তাঁর ভাষায়, আবরারের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত শোকের ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক মাইলফলক।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে নাহিদ ইসলাম এই কথা বলেন। এরপর বেলা সাড়ে ৩টায় কুষ্টিয়া শহরের ৫ রাস্তার মোড়ে সংক্ষিপ্ত পথসভায়ও একই বক্তব্য দেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আবরারের মৃত্যু ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াইকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। আবরার ফাহাদ বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। ফেসবুকে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লেখালিখির কারণে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের হলের মধ্যে ছাত্রলীগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। নাহিদের দাবি, বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে কথা বলাই আবরারের ‘অপরাধ’ ছিল। বিশেষ করে ফেনী নদী চুক্তি নিয়ে তাঁর লেখা ভারতীয় আধিপত্যবাদকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। সেই আবরার ফাহাদ আজ বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আবরারের মৃত্যুর প্রতিবাদেই “দিল্লি না ঢাকা” স্লোগান উঠেছিল। সেই স্লোগান আবারও উঠে এসেছে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে। তিনি বলেন, “আবরার আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে কেমন রাজনীতি করতে হয়। তাঁর দেখানো পথেই আমরা এগোতে চাই।” তাঁর মতে, আবরারের দেখানো সেই পথেই ২০১৯ সালের পর থেকে দেশে আধিপত্যবাদ বিরোধী ও সন্ত্রাস বিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত গিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদের হত্যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নতুন করে নাড়া দিয়েছিল। আবরারের মৃত্যু এবং তার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আবরার ফাহাদ থেকে আবু সাঈদ পর্যন্ত সব শহীদদের কথা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত ১৬ বছরে গুম, খুন এবং নির্যাতনের শিকার হওয়া সব শহীদ ও নির্যাতিতদের আদর্শ ও স্বপ্ন তাঁরা ধারণ করছেন। তাঁর ভাষায়, “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রায় আমরা সেই শহীদদের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই চলছি।”

এর আগে বেলা ১টায় এনসিপির নেতারা কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন। সেখান থেকে আলাউদ্দিন মোড়ে সংক্ষিপ্ত পথসভা শেষে তাঁরা কুষ্টিয়া শহরের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। বিকেল সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়ার ৫ রাস্তার মোড়ে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ পথসভা থেকে কুষ্টিয়ার কর্মসূচির সমাপ্তি হয়। পরে পদযাত্রা মেহেরপুর জেলার দিকে এগোয়। উল্লেখ্য, এই পদযাত্রা শুরু হয়েছিল ১ জুলাই রংপুর থেকে।

এদিনের কর্মসূচিতে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, নুসরাত তাবাসসুম, ডা. তাসনিম জারা, সামান্তা শারমিন, ড. আতিক মুজাহিদ, আখতার হোসেন, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এনসিপির অঙ্গ সংগঠন যুব শক্তি এবং শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

নাহিদ ইসলামের ভাষায়, “যে বাংলাদেশ দেখতে আবরার ফাহাদ স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে স্বাধীন, সার্বভৌম এবং মর্যাদার বাংলাদেশের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ গড়তেই আমরা পথ হাঁটছি।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে