কালীগঞ্জের মা ও শিশু হাসপাতালে ডাক্তারের অভাব

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ৯ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম
কালীগঞ্জের মা ও শিশু হাসপাতালে ডাক্তারের অভাব


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে এমনটি আশা ছিল এলাকাবাসীর। মাতৃমৃত্যু হ্রাস, শিশুরোগের উন্নত চিকিৎসা ও নিরাপদ প্রসবের লক্ষ্য নিয়ে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হয় হাসপাতালটি। প্রায় সাড়ে ৩ বছর এ ভাবে পড়ে রয়েছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে সঠিক সেবা নেই অসহায় রোগীদের। সেবার পরিবর্তে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মহিলা ও শিশু রোগীদের। বর্তমানে ডায়রিয়া, জ্বর ও সর্দি-কাশি রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য অসহায় রোগী চলে যায় মা ও শিশু হাসপাতালে। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই হাসপাতালটি কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে। জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত সেবা পাচ্ছে না। চিকিৎসক নেই, নার্স নেই, প্রয়োজনীয় স্টাফ নেই।ধুলোয় ঢেকে যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটার, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি। ফাঁকা পড়ে আছে ওয়ার্ড ও বেড। পানির লাইন অচল হয়ে গেছে। হাসপাতাল টি এখন পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এখানে ১২ জন জনবল থাকার কথা। যার মধ্যে ২ জন চিকিৎসক, ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান,১ জন ফার্মাসিস্ট,১ জন আয়া,১ জন ওয়ার্ডবয়,১ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডবিউভি),৪ জন অফিস সহায়কসহ বেশ কিছু পদ থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন।হাসপাতারটিতে ২৪ ঘণ্টা সেবা থাকার কথা থাকলেও তা নেই। রোগীরা রেজিস্টারে নাম লেখানোর পর জানতে পারেন চিকিৎসক নেই, পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে গর্ভবতী নারীসহ মা ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার আশায় আসেন। কেউ আসেন প্রসবজনিত জটিলতা নিয়ে, কেউ মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড নিতে। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।রোগীর সঠিক চিকিৎসা এ হাসপাতালে না মিললেও রাজার হালে এখানে চাকরি করছেন কয়েকজন কর্মচারী। কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর এলাকায় অবস্থিত ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালটিতে দুই জন মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পদায়ন থাকলেও বর্তমানে এই হাসপাতালে একজন ডাক্তারও নেই।হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা মর্জিনা বেগম নামের এক প্রসুতি মায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম, কিন্তু ডাক্তার নেই। এত সুন্দর হাসপাতাল অথচ ডাক্তার নেই। এমন হলে আমরা সেবা পাব কিভাবে।শুরু থেকেই হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি ও অপারেশন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। 

কালীগঞ্জ পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন বলেন, অনেকবার চিঠি দিয়েছি, দাবি তুলেছি কমপক্ষে একজন মহিলা চিকিৎসক নিয়োগের জন্য কিন্তু অদ্যবধি কোনো ফল নেই। এত বড় হাসপাতাল পড়ে আছে অকেজো অবস্থায়। 

কালীগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ নির্মান করা হয়। এটি এলাকার গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য অনেক উপকারের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ এটি করেন। কল্যাণ কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। কালীগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রায় সাড়ে ৩ বছর উদ্বোধন হলে ও অদ্যাবধি কোন চিকিৎসক এখানে যোগদান করেনি। শুরু থেকেই চলছে এভাবে চিকিৎসক বিহিন এবং এখন পর্যন্ত রোগি ভর্তি বা আপারেশন হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের এ নিয়ে কার ও কোন মাথা ব্যাথা নেই, সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় জনবল ও ডাক্তারের অভাবে এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না। 

উপজেলাপরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, হাসপাতালটি ভৌগোলিক ভাবে চমৎকার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাই, এটি সম্পূর্ণ ভাবে সচল হোক। কিন্তু জনবল না থাকায় নিয়মিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তারপরও সীমিত সামর্থ্যে কিছুটা সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।