নীলফামারীর সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী নিবাসটি শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়া নামের কারণে ১৬ বছর উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাস নাম হওয়ায় অনেকটা অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে এ হোস্টেলটি। কলেজ সুত্র জানান,শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলের শেষ দিকে সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অঞ্চলে নারী শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেই করা হয় এ কলেজের গোড়াপত্তন। ভাল ফলাফলের কারণে ক্রমান্বয়ে কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দূর দূরান্ত থেকে বিদ্যা অর্জন করতে আসে অনেক নারী শিক্ষার্থী। ফলে ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই ভাবনা নিয়েই এগুতে থাকে। কিন্তু চিন্তার বাস্তব রুপ দেয়া খুবই কঠিন বিষয়। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে।
বিগত ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে এমপি নির্বাচিত হন এ জনপদের বিদ্যান ব্যক্তি অধ্যাপক আব্দুল হাফিজ। শিক্ষাব্রতী এ মানুষটির হাত ধরে সৈয়দপুর ডিগ্রী মহিলা কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তি স্থাপন করেন সাংসদ অধ্যাপক আব্দুল হাফিজ ১৯৯৫ সালে। এসময় বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সরকার প্রধান।
কাজ শুরুর বছর শেষের মাথায় ফের সরকার পরিবর্তন হয়। ক্ষমতায় আসীন হন শেখ হাসিনা। আবার কাজ থমকে দাঁড়ায়। বিগত ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসেন। দেশের দ্বিতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। এই সময়ে নীলফামারী-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেন সরকার ভজে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি সৈয়দপুরের স্থানীয় মানুষ ছিলেন। এবারে কলেজ কর্তৃপক্ষ যোগ্য অভিভাবক পায় ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজের। কাজ দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়। হোস্টেলের নাম রাখা হয় বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাস। এটির উদ্বোধন করা হয় বিগত ২০০৩ সালে। উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ.ন.ম এহছানুল হক মিলন ও স্থানীয় এমপি আমজাদ হোসেন সরকার ভজে। দীর্ঘ প্রত্যাশিত আকাঙ্খা পূরণ হলো সৈয়দপুরের মানুষের।
প্রকৌশল বিভাগের তথ্য মতে,ভবন নির্মাণের পরের বছর থেকে পাঁচ পার্সেন্ট করে ভবনের আয়ু কমতে থাকে। এজন্য নিয়মিত চুনকাম ও সংস্কার করতে হয়।
ওই কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো.শাহীদ শাহাব বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে চারতলা এই ছাত্রী হলটি অর্থের অভাবে কোনো ধরনের সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ৮৪ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। টেবিল, চেয়ার ও থাকার বেড নড়বড়ে হওয়ায় আবাসিক ছাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। ৮৪ জনের জায়গায় এখন ছাত্রী থাকছে মাত্র ৩২ জন। বাথরুমের ফিটিংস, দরজা,জানালা নষ্ট। ফ্লোর ব্যবহার অনুপযোগী। চুনকামের অভাবে ভবনের পলেস্তার খুলে পড়ছে। সমস্যার কারণে রান্নাঘর ব্যবহার কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রয়েছে ডাইনিং রুমে সরঞ্জামের অভাব। মেট্রোন, কুক ও সুইপারের বেতনের কোনো বরাদ্দ নেই। হোস্টেল থেকে যৎসামান্য যা আয় হয় তা দিয়ে ছাত্রী নিবাসের ব্যয়ভার মেটানো অনেক কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবার বিদ্যুৎ সমস্যা। এমন অবস্থায় আবাসিক ছাত্রী সংখ্যা কমলেও ব্যয়ের পরিমাণ থাকছে ঠিক।
অধ্যক্ষের দেয়া তথ্য মতে বিগত সরকারের আমলে হলের সংস্কার কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু হলের নাম বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাস হওয়ায় কর্তৃপক্ষ টাকা ছাড় করেনি। ফলে বিগত সরকারের পুরো আমলেই সরকারি অর্থ না মেলায় হলের সংস্কার কাজ করা সম্ভব হয়নি। হলটির বিরাজমান সমস্যা সমাধান করা হলে প্রতিটি সিটেই ছাত্রী থাকবে। এতে আয়ও বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে আবাসিক প্রতিজন ছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তির সময় ২ হাজার ৫০০ টাকা একযোগে নেয়া হয়। আর প্রতি মাসে সিট চার্জ ৮০০ এবং প্রতিদিনের তিন বেলা খাবারের জন্য প্রতিজন আবাসিক ছাত্রীর কাছে নেয়া হয় ১০০ টাকা করে। কম ছাত্রী থাকায় আয় কম হলেও ব্যয় সবসময় একই থাকে। এজন্য তিনি দ্রুত ছাত্রী হলটির সংস্কারে সরকারি বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের বিষয়ে কথা হয় সাবেক ছাত্রদল সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পুর সাথে তিনি বলেন,বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ছাত্রী হলটি ঢেলে সাজানো হবে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও বিএনপি সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ আবদুল গফুর সরকার বলেন,বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সৈয়দপুর মহিলা কলেজের হোস্টেল সমস্যার সমাধান সর্বপ্রথম করা হবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম বলেন,বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রী নিবাসটি নতুন রুপে সাজানো হবে।