বরিশালের ৮০টি স্থানে নদী ভাঙনের ঝুঁকি

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১১ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম
বরিশালের ৮০টি স্থানে নদী ভাঙনের ঝুঁকি

কীর্তনখোলা, সন্ধ্যা, তেঁতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, সুগন্ধা, জয়ন্তীসহ মেঘনা নদীর তীরবর্তী ৮০টি স্থান ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার নদী তীরের বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে বসতিপূর্ণ এমন ৮০টি স্থানের প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার ভাঙনের অতিঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণস্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, সড়ক, ফসলি জমি এবং বসত বাড়ি রয়েছে। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, জেলার মধ্যদিয়ে বড় বড় যে নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে তারমধ্যে ৮০টিরও বেশি স্থান ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাঙনরোধে এসবস্থানে প্রায় ৬০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চিহ্নিত ৮০টির মধ্যে ৩৫টি স্থানের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৫টি স্থানে ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

জাবেদ ইকবাল আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে নদী ভাঙন একটি প্রকট সমস্যা। প্রতিবছর বর্ষায় ভাঙন দেখা দেয়। বিশেষ করে অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছাসে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও ভাঙন শুরু হয়। নদীর প্রবল স্রোতেও ভাঙন শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব সমস্যা সমাধানে স্থায়ী পরিকল্পনা করছে।

সূত্রমতে, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ আইচা গ্রামের প্রায় পাঁচশ’ মিটার সড়ক আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এই স্থানে ভাঙন নতুন কিছু নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই নদী ভাঙনে গ্রামটি বিলীন হচ্ছে। ওই গ্রামের কৃষক বারেক মুন্সী বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে গ্রামের রাস্তা ভেঙে গেছে। অনেকগুলো পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে।

দক্ষিণ আইচা গ্রামের পাশেই চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রাম গিলতে শুরু করেছে কীর্তনখোলা নদী। বিগত সরকারের আমলে নদী ভাঙনরোধে তাৎক্ষণিক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও চলতি বর্ষায় ভাঙন ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, দুই দফায় ভিটা বদল করেছি। নদী আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে।

বরিশাল সদর উপজেলা অংশ পেরিয়ে আড়িয়াল খাঁ নদীর বাবুগঞ্জ অংশের বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের শিকারপুর ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ভাঙন চলছে। কয়েক বছরের ভাঙনে ব্রিজের আশপাশ এলাকার ফসলি জমিসহ বেশ কিছু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙনে ব্রিজটিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বরিশাল বিমানবন্দর এলাকার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে অপরাংশের ভাঙন।

আড়িয়াল খাঁ নদীর মুলাদী উপজেলা অংশের সফিপুর ইউনিয়নের ভেদুরিয়া থেকে ঘুলিঘাট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় চার শতাধিক পরিবার। একই উপজেলার জয়ন্তী নদীতে মৃধারহাট, ষোলঘর, ভেদুরিয়া, বাটামারা, আলীমাবাদ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা এবং সুগন্ধা নদীর অংশে দশটি ইউনিয়ন, বাকেরগঞ্জ উপজেলার কারখানা নদী অংশের চারটি ইউনিয়ন এলাকা, আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীর মোহনার গৌরনদী ও মুলাদী উপজেলার সীমান্তবর্তী মিয়ারচর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর বরিশালের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষনিক পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয়না। নদী ভাঙনরোধে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। উদাহরন দিয়ে তিনি বলেন, হোয়াংহো নদীকে বলা হতো চীনের দুঃখ। নদীটি এতো বেশি ভাঙতো যে লোকালয় হারিয়ে যেতো। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে হোয়াংহো এখন আর ভাঙে না।

প্রফেসর শাহ সাজেদা আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে নদী ভাঙন থাকবে। তাই ভূমি রক্ষায় নদীর গতিপথ পর্যালোচনা করে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করলে নদী শাসন হবে, ভাঙনও রোধ হবে। সেসব না করে বালুর বস্তা আর ব্লক ফেলে বড় বড় এসব নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়।