হোমনায় সংস্কারের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল কালভার্ট

এফএনএস (মোর্শেদুল ইসলাম শাজু; হোমনা, কুমিল্লা) : | প্রকাশ: ১২ জুলাই, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম
হোমনায় সংস্কারের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল কালভার্ট

কুমিলার হোমনায় একটি পুরনো কালভার্ট সংস্কার না করেই কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুলালপুর থেকে রামকৃষ্ণপুর পর্যন্ত একটি সড়ক। ফলে অল্পদিনেই কালভার্টটি ভেঙে মাঝপথে সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ। ভাঙ্গা স্থানে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। এটি দৌলতপুর মোল্লা বাড়ির শামীম মিয়ার বাড়ির পাশে অবস্থিত। এ সড়কটি উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পঞ্চাশ হাজার জনগোষ্ঠীর চলচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে হোমনা উপজেলার দুলালপুর থেকে রামকৃষ্ণপুর পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ ও পাঁচ মিটার প্রশস্ত এই সড়কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়। গত বছরের ২৫ মার্চ এই সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে এবছর  ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।   

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ কালভার্টটি বহু বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। সে সময় গ্রামের নালা ও দুই পাশের ফসলী জমি চাষাবাদের জন্য এটি ছিল প্রয়োজনীয়। কালক্রমে এ সড়ক সমপ্রসারণ ও উঁচুকরণে সংস্কার এবং আশে পাশে বাড়িঘর উঠে যাওয়ায় বর্তমানে এর দুই পাশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে কালভার্টের ভেতর দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই। অথচ সড়কটি নির্মাণের আগে এটি অপসারণ বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কয়েক দিন আগে কালভার্টটির টপ স্ল্যাবের অংশবিশেষ ভেঙে পড়েছে, যার ফলে কয়েকটি ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর অবগত হয়েছেন। 

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘অল্পকিছুদিন আগেই রাস্তাটি হয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তার মাঝখানের এই ব্রিজটি ভেঙ্গে গেছে। এখানে সিএনজি ও অটো রিক্সার কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে।”

আরেক বাসিন্দা লিটন মোল্লা বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণের আগেই অনেক পুরোনো এই কালভার্টটি ভেঙ্গে ভরাট করার প্রয়োজন ছিল অথবা সংস্কার করার প্রয়োজন ছিল।’ তা না করায় রাস্তা হওয়ার পরে যানবাহন চলাচল বেড়ে গেছে। ফলে অনেক পুরোনো এই কালভার্টটি ভেঙ্গে গেছে। এখানে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

খোকন নামে আরেক সিএনজি চালক জানান, ‘দৌলতপুরে রাস্তার মাঝখানের এই ব্রিজটি অনেক পুরাতন। রাস্তাটিও অনেক ভাঙাচোড়া ছিল। এখন রাস্তাটি মেরামত করায় অনেক সুবিধা হয়েছে। গাড়ির চাপও বেড়ে গেছে। ছোট গাড়ির পাশাপাশি বড় ট্রাক, ট্রাক্টর চলাচল করে। ফলে এতো লোড নিতে না পারায় পুরাতন এই ব্রিজটি ভেঙে গেছে। দ্রুত এটি মেরামত করা জরুরী।”

দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘হোমনা রামচন্দ্রপুর সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ওপর বহু পুরোনো এই কালভার্টটি ভেঙ্গে মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছিল। ইউএনও মহোদয়কে জানিয়েছি। পরে প্রাথমিকভাবে ভাঙা জায়গাটি বালু দিয়ে ভরাট করে দিয়েছি। এখন মোটামুটি যানবাহন চলতে পারছে।

সচেতন অনেকেই বলছেন, “যেখানে রাস্তা নির্মাণে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, সেখানে একটি পুরনো কালভার্ট কীভাবে নজর এড়ালো?” 

স্থানীয়রা অবিলম্বে এই ভাঙা কালভার্ট সংস্কার করে চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। না হলে যে কোনো সময় আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘যেহেতু, কালভার্টটি বর্তমানে সচল নেই, পানি চলাচল করেনা, এর দুপাশেই মাটি ভরাট হয়ে গেছে এবং কালভার্টের টপ স্ল্যাব আপতদৃষ্টে ভালো মনে হওয়ায় সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যেহেতু, বর্তমানে স্ল্যাবটির কিছু অংশ ভেঙে গেছে, তাই উপজেলা পরিষদ থেকে দ্রুততায় মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ই- মেইলে ছবি আছে। সড়কের মাঝখানে পুরোনো জরাজীর্ণ কালভার্টটি এখন স্থানীয়ভাবে বালু ভরাট করে যানচলাচল সচল রাখা হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে