বাড়ছে শিশু হত্যা; অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

এফএনএস
| আপডেট: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৯ এএম | প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:১৫ এএম
বাড়ছে শিশু হত্যা; অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

সম্প্রতি ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায় বিষাদময় হয়ে উঠেছিল সকলের হৃদয়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জনমনে এ ঘটনার ধাক্কার রেশ না কাটতেই ১৬ নভেম্বর রাজধানীতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে দুই ভাই শিশু রোহান (৭) ও মুসা (৩)। হত্যাকারী তাদেরই বাবা। দেশে গত আট বছরে যে ৪ হাজারের বেশি শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তারই সাম্প্রতিকতম নজির মুনতাহা, রোহান, মুসারা। বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ বছরে অন্তত ৪ হাজার ৩৮০ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসের পরিসংখ্যান যুক্ত করলে সংখ্যাটা আরও ৪৮২ জন বাড়বে। ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) শারীরিক নির্যাতন, সহিংসতা, ধর্ষণ, অপহরণ ও নিখোঁজের পর খুনসহ বিভিন্ন কারণে ৪৮২ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪২১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছর শিশু হত্যা বেড়েছে ৬১ জন।

চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৮০ শিশু। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে এ সংখ্যা ছিল ৯২০ জন। ২০২৪ সালে শিশু নির্যাতনের সংখ্যা অনেক কমেছে। রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত আমাদের নীতি–নৈতিকতার কথা শোনান। সরকারের ব্যক্তিবর্গ শোনান আইন ও বিচারের কথা। তবু কেন রাজনের পর রাকিব, রাকিবের পর আয়াত, আয়াতের পর মুনতাহাদের লাশ আমাদের দেখতে হয়? আর কত শিশুকে এভাবে ‘প্রতীক’ হয়ে ওঠতে হবে তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতার জানান দিতে? গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার রক্ষায় বেশকিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তাদের পরিস্থিতি আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন করেনি। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ঘটেনি। এসব পদক্ষেপের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জন্য কার্যকর পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত দিনের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আশাবাদ জাগ্রত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোয়ালিশন মনে করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিশুদের জন্যও একটি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ নিশ্চিত করার উদ্যোগসমূহ জোরদার করতে হবে। এখন জরুরি ভিত্তিতে শিশু সহায়তা ডেস্ক গঠন করা, প্রতিটি থানায় শিশুদের সহায়তার জন্য পৃথক পুলিশ অফিসার নিয়োগ করা প্রয়োজন। সেইসাথে অবশ্যই শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।