বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ ফের তীব্র হয়ে উঠেছে। একদিনেই সারাদেশে নতুন করে ৪২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে চট্টগ্রামে প্রাণ হারিয়েছেন একজন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬ জনে।
রোববার (১৩ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এবং চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সী নুরুল আলম নামের ওই ব্যক্তি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি শুক্রবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং শনিবার সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চলতি বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে এটি প্রথম মৃত্যু হলেও, চলতি বছরে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়িয়েছে।
একই সময়ে চট্টগ্রামে নতুন করে আরও ২৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন পুরুষ, ৮ জন নারী এবং ৭ জন শিশু। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত মোট ৬০৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। জেলার আক্রান্তদের মধ্যে ২৭৭ জন নগরীর এবং ৩৩২ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা, যাদের সংখ্যা ১০৪ জন।
সারাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শনিবার (১২ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে রোববার (১৩ জুলাই) সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে বরিশাল বিভাগে ১১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৯ জন, ঢাকা বিভাগের সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় ৬০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫৭ জন, খুলনা বিভাগে ২৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন এবং রংপুর বিভাগে ৩ জন নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে একদিনেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮১ জন রোগী চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৩ হাজার ৫৮৪ জন।
চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৪ হাজার ৮৮০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
পিছনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। সে বছর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। চট্টগ্রামেই ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮২ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ১০৭ জনের। তার আগের বছর ২০২২ সালে সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন। আক্রান্ত সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার কমাতে এডিস মশার বিস্তার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।