চানখাঁরপুলে ছয়জন হত্যাকাণ্ড: হাবিবুরসহ আট আসামির বিচার শুরু

রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ছয় জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত রোববার (১৪ জুলাই) বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আগামী ১০ আগস্ট মামলার সূচনা বক্তব্য গ্রহণ এবং ১১ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে।

আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন গ্রেপ্তারকৃত চার আসামি—সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন, কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা এলাকার সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা এলাকার সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক আছেন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর আসামিরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। ছয়জন শহিদ হয়েছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ১১ এপ্রিল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্তে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়, ১৯টি ভিডিও ফুটেজ, ১১টি সংবাদ প্রতিবেদন, ২টি অডিও, বিভিন্ন বই ও রিপোর্ট এবং ছয়টি মৃত্যু প্রত্যয়নপত্র দাখিল করা হয়। প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, তদন্তে ৬ মাস ১৩ দিন লেগেছে। তিনি আরও বলেন, মামলায় রয়েছে এক অডিও কল যেখানে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করার নির্দেশ দেন এবং পুলিশের সদস্যরা এ নির্দেশে সরাসরি গুলি চালায়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সরকারি অনুগত প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের অংশগ্রহণে সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।

আদালত অভিযোগ গঠনকালে আসামিরা অপরাধ অস্বীকার করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করলে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার নির্দেশ দেয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

এর আগে ১০ জুলাই একই ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু করার আদেশ দেয়।