দিনাজপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা অনৈতিক চাহিদা মেটাতে না পারায় হয়রানির শিকার

এফএনএস (মোঃ আতিউর রহমান; বিরল, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ১৭ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
দিনাজপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা অনৈতিক চাহিদা মেটাতে না পারায় হয়রানির শিকার

দিনাজপুরে ব্যাংক কর্মকর্তা (অবঃ) মোজাম্মেল হোসেন অসৎ এক কর্মকর্তার অনৈতিক চাহিদা মেটাতে না পারায় হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানি কারীর দ্রুত বিচার ও নিজের পাওনা টাকা ফেরৎ পেতে পূণরায় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক রংপুর বরাবরে গত ২৬ জুন-২০২৫ তারিখে অভিযুক্ত জোনাল নিরীক্ষা কর্মকর্তা মোঃ খাইরুল ইসলাম বর্তমান ডিজিএম কেঃ হিঃ বিঃ-২ এর বিরুদ্ধে অভিযোগসহ আনুতোষিক হতে কর্তনকৃত ৩ লাখ ৭৪ হাজার ১৬৪ টাকা প্রদান প্রসঙ্গে আবেদনে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন উর্ধতন মূখ্য কর্মকর্তা (অবঃ) জানান, প্রধান কার্যালয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের ০২ মে-২০২৩ তারিখের অভ্যন্তরীন পত্র সূত্র নং প্রকা/মাসউবি-০৭ (৩৬৮৬) এর প্রতি আপনার সানুগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মোঃ মোজাম্মেল হোসেন গত ২০ জানুয়ারি-২০২২ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন। ব্যবস্থাপক হিসাবে সেতাবগঞ্জ শাখায় ২৭ ফেব্রুয়ারি-২০১৬  হতে ১০ ডিসেম্বর-২০২০ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন তিনি। ৩০ জুন-২০১৯ ও ৩০ জুন-২০২০ দুই বছরের নিরীক্ষা একই সময়ে করেন খাইরুল ইসলাম জোঃ নিঃ কর্মকর্তা হিসাবে। অতঃপর শাখার নিরীক্ষাকালে মোঃ মোজাম্মেল হোসেনকে লেন-দেনের অনৈতিক প্রস্তাব দিলে তা একমত না হওয়ায় অনেক আপত্তি উল্লেখ করেন যা ব্যাংকিং নীতিমালার বহির্ভূত। তৎসঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপক আজমীর হোসেন (মুঃ কঃ) উভয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মোঃ মোজাম্মেল হোসেনকে হয়রানী ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ করেন। মোঃ মোজাম্মেল হোসেনকে আত্মপক্ষ সমর্থন মূলক বক্তব্য ও যুক্তি প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন- প্রধান কার্যালয়, কমপ্লায়েল বিভাগের অভ্যন্তরীণ পত্র নং- প্রকা/কমপ্লায়েল বিঃ/৩৭/২০২২-২০২৩/৬৮৫, তাং-০২/০২/২০২৩ এর অনুচ্ছেদ (ক) (১) মোতাবেক সেতাবগঞ্জ শাখা, দিনাজপুর (উঃ) এর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৬/২০১৯ ও ৬/২০২০ এর ১৮ (গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঋণ আদায়ের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ হিসেবে ৪১২ জন ঋণ গ্রহীতাকে উকিল নোটিশ প্রদান বাবদ ৪৭ হাজার ৭৯২ টাকা ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি করায় তা ব্যবস্থাপকের (নিম্ন স্বাক্ষরকারীর) নিকট হতে আদায় করতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ হিসাবে ডেবিট (উবনরঃ) করে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন পূর্বক ব্যাংকের প্যানেল এ্যাডভোকেটকে উক্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এখানে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতির প্রশ্ন উঠছে কেন এবং আমার নিকট হতে তা আদায়যোগ্যই বা হবে কেন? বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। যা হোক, উক্ত ঋণগুলো ইতোমধ্যে সম্পূর্ণভাবে আদায় হয়েছে। এমতাবস্থায়, উক্ত ৪৭ হাজার ৭৯২ টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট আদায়যোগ্য হতে বিয়োজনের আবেদন জানিয়েছেন।

সেতাবগঞ্জ শাখা, দিনাজপুর (উঃ) এর বাণিজ্যিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ২০১৫- ২০১৯ এর ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদ মোতাবেক বিভিন্ন এফডিআর হিসাব হতে সরকার নির্ধারিত হারে উৎসে কর কর্তন না করায় ক্ষতি ১ লাখ ২৫ হাজার ১৫১ টাকার ৫০% যা ৬২ হাজার ৫৭৬ টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট হতে আদায়যোগ্য ধরা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জানান, বর্ণিত এফডিআর হিসাবগুলো কোনো ব্যক্তি বিশেষের ছিলো না। উক্ত হিসাবগুলো দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃক পরিচালিত। একই সময়ে দিনাজপুর (উঃ) জোনের আরো ৩টি শাখায় (দিনাজপুর, বীরগঞ্জ ও রাণীরবন্দর) বাণিজ্যিক নিরীক্ষা পরিচালিত হয় এবং একই ধরণের আপত্তি উত্থাপিত হলে শাখাসমূহ তাৎক্ষনিকভাবে বদলী ভাউচার করে তা সমন্বয় পূর্বক নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করে। অথচ সেতাবগঞ্জ শাখা তা ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিপালন না করে উক্ত অর্থ আমাার নিকট হইতে আদায়যোগ্য করেছে। যাহা হোক বিষয়টি এখনো সম্পন্ন করে নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। এমতাবস্থায়, উক্ত ৬২ হাজার ৫৭৬ টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট আদায়যোগ্য হতে বিয়োজনের আবেদন জানানো হয়।

কমপ্লায়েন্স বিভাগের সূত্রোক্ত অভ্যন্তরীণ পত্রের অনুচ্ছেদ (খ) (১) মোতাবেক সেতাবগঞ্জ শাখা, দিনাজপুর (উঃ) এর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন ৬/২০২০ ও ৬/২০২১ এর ২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৪টি ঋণ হিসেবের (৭১-১০৪১, ৭১-১০৪২, ৭১-১০৪৫ ও ৭১-১০৪৭ তামাদি ঋণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৫১ টাকার ২০% যা ৯১ হাজার টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর আনুতোষিক হতে কর্তন করে ভবিষ্যতে সমন্বয়ের জন্য প্রদেয় খাতে সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ হতে ১০ ডিসেম্বর-২০২০ তারিখ পর্যন্ত ব্যবস্থাপক হিসেবে সেতাবগঞ্জ শাখায় কর্মরত থাকায় নিরীক্ষা আপত্তিতে উল্লেখিত ৩টি ঋণ (৭১-১০৪১, ৭১- ১০৪২ ও ৭১-১০৪৫) ভূমিহীন বর্গা চাষীদেরকে দলীয় ভিত্তিতে এবং ৭১-১০৪৭ ফলিও এর ঋণটি একক ব্যক্তিকে ২৯ ডিসেম্বর-২০১১ তারিখ শষ্য বন্ধকী (ঈৎড়ঢ় ঐুঢ়ড়ঃযবপধঃরড়হ) ঋণ হিসাবে শাখা বিতরণ করে, যার দেয় তারিখ নির্ধারিত ছিলো ৩০ ডিসেম্বর-২০১২ চঁনষরপ উবসধহফ জবপড়াবৎু অপঃ, ১৯১৩ এর বিধান মতে এই ধরণের সহায়ক জামানত (ঈড়ষষধঃবৎধষ ঝবপঁৎরঃু) বিহীন শষ্য বন্ধকী (ঈৎড়ঢ় ঐুঢ়ড়ঃযবপধঃরড়হ) ঋণ দেয় তারিখ হতে ৩ বছর পর তামাদিতে আক্রান্ত হবে। সেমতে ৩০ ডিসেম্বর-২০১৫ তারিখ ঋণগুলোর তামাদিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ফলিওগুলো যাচাই করে দেখা যায় যে, উক্ত দেয় তারিখের ধারাবাহিকতায় গ্রহীতাগণ একাধিক বার আংশিকভাবে ঋণ পরিশোধ করছেন। সর্বশেষ ঋণ পরিশোধের তারিখ যথাক্রমে ২৩ ডিসেম্বর-২০১৯, ১৮ ডিসেম্বর-২০১৯, ১৭ ডিসেম্বর-২০১৮ ও ১৮ ডিসেম্বর-২০১৯। সে মতে ঋণ আদায়ের আর কোন কার্যক্রম গ্রহণ না করা হলে ঋণগুলো যথাক্রমে ২৩ ডিসেম্বর-২০২২, ১৮ ডিসেম্বর-২০২২, ১৭ ডিসেম্বর-২০২১ ও ১৮ ডিসেম্বর-২০২২ তারিখ নতুন করে তামাদিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু উক্ত তারিখের পূর্বেই যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বর্ণিত ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর-২০১৯ তারিখ সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে, যা এখনো চলমান আছে। অর্থাৎ ঋণগুলো কখনই তামাদিতে আক্রান্ত হয়নি এবং ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা চলমান আছে। এমতাবস্থায়, উক্ত ৯১ হাজার টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন নিকট আদায়যোগ্য হতে বিয়োজনের আবেদন জানানো হয়।

কমপ্লায়েন্স বিভাগের সূত্রোক্ত অভ্যন্তরীণ পত্রের (৬) অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাকাব, সেতাবগঞ্জ শাখার না দাবী প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী মনোহারী খাতে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ও বিবিধ খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য আমার নিকট হতে ১৪ হাজার ৫৯০ টাকা আদায় যোগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের প্রয়োজনে যথাযথ প্রক্রিয়া/পদ্ধতি অনুসরণ করে বর্ণিত ব্যয়সমূহ নির্বাহ করা হয়েছে বলে মোঃ মোজাম্মেল হোসেন জানান এবং এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি বলেও জানান। বাজেট বরাদ্দ একটি নিছক নির্দেশনা (ওহফরপধঃরড়হ) মাত্র। জোনাল ব্যবস্থাপক মহোদয়ের নিকট হতে ভূতাপেক্ষ (চড়ংঃভধপঃড়) অনুমোদন গ্রহণ করে এ ধরণের নিরীক্ষা আপত্তি নিষ্পত্তি করার কথা। অথচ তা না করে শাখা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে উক্ত অর্থ মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট হইতে আদায়যোগ্য নির্ধারণ করেছে। বিষয়টি দুঃখজনক তাই ১৪ হাজার ৫৯০ টাকা মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট আদায়যোগ্য হতে বিয়োজনের আবেদন জানানো হয়।

কমপ্লায়েন্স বিভাগের সূত্রোক্ত অভ্যন্তরীণ পত্রের (ঘ) অনুচ্ছেদ মোতাবেক রাকাব, রাণীরবন্দর শাখার না দাবী প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী বিভাগীয় শৃঙ্খলা মোকদ্দমায় মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর নিকট হতে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৪ টাকা আদায়যোগ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আদায়যোগ্য উক্ত অর্থ হতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ টাকা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আদায়/সমন্বয় হয়েছে। এমতাবস্থায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৪ টাকা হতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ টাকা যার ১ লাখ ১১ হাজার ২৪৮ টাকা সংশোধিত দায়-দেনা নির্ধারণের আবেদন জানানো হয়।

শাখা ব্যবস্থাপক কম্পিউটারাইজড হওয়ার শুরুতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও ব্যবস্থাপক কম্পিউটারের প্রথম পর্যায় তেমন কোন অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট খাত এ যথাযথ পোষ্টিং হয় পরবর্তীতে উহা বদলী ভাউচারের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে। ১ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ টাকা সংশ্লিষ্ট শাখায় বর্তমানে প্রদানযোগ্য খাতে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, গত ২১ আগস্ট-২০২৫ তারিখে নীলফামারী জোনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর অমানবিক নির্যাতনের প্রেক্ষিতে ২২টি শাখার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী মোঃ খায়রুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে তাৎক্ষনিক বদলী করে যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়। একই দিনে তাকে ২ বার বদলী করতে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়। পরে ব্যাংকের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয় এবং তাকে কঠিনভাবে সতর্ক করে বিভিন্ন শাখায় তার চাকুরীকালীন সময় সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এবং একাধিক শাখায় তার বিরুদ্ধে পার্ট-১ হয়। চাকুরী থেকে অবসরে গেলেও এরকম একজন বিতর্কিত ডিজিএমকে বিভিন্ন শাখায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন ভূক্তভোগী অনেকে। মোঃ মোজাম্মেল হোসেন এর অভিযোগের বিষয়ে একজন সৎ কর্মকর্তাকে দিয়ে পুণরায় তদন্ত করে তাঁর পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তিনি আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে