গাজায় একদিনে নিহত ৯৪, যুদ্ধবিরতির মাঝেই গির্জায় ইসরায়েলি হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৮ জুলাই, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
গাজায় একদিনে নিহত ৯৪, যুদ্ধবিরতির মাঝেই গির্জায় ইসরায়েলি হামলা

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) একদিনেই নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি। উপত্যকাটির বিভিন্ন এলাকায় চালানো নির্বিচার হামলায় আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। এমনকি গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা ‘হলি ফ্যামিলি’-তেও হামলা চালায় দখলদার বাহিনী। একই দিনে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতির দাবি করেছে তেল আবিব, যদিও হামাস এ নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৭ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে। বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এছাড়া, মানবিক ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ২৬ জন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন। ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৮৭৭ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৭০০ জন।

ধ্বংসযজ্ঞের বাইরে ধর্মীয় স্থানেও হামলা চালানো হয়েছে। গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জা ‘হলি ফ্যামিলি’-তে চালানো এক হামলায় ফাদার গ্যাব্রিয়েল রোমানেলি আহত হয়েছেন। কয়েকজন উপাসক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ইসরায়েলকে সরাসরি দায়ী করে তীব্র নিন্দা জানান।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশু নিহত হচ্ছে। গত ২১ মাসে প্রাণ গেছে অন্তত ১৭ হাজার শিশুর, আহত হয়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। সংস্থাটি বলছে, খাদ্য ও ওষুধের লাইনে দাঁড়ানো এই শিশুরা কোনোভাবেই যোদ্ধা নয়।

এরমধ্যে ইসরায়েল দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। দোহায় মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনায় একটি নতুন প্রস্তাবও উঠেছে, যেখানে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে মোরাগ করিডোর থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে হামাস এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

অন্যদিকে, যুদ্ধ শেষে গাজায় প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে আরব দেশগুলোর গৃহীত রোডম্যাপ অনুযায়ী গাজা পুনর্গঠনে অংশ নেবে তারা। একইসঙ্গে গাজাবাসীদের জোর করে স্থানান্তরের যেকোনো পরিকল্পনার বিরোধিতা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার মাত্রা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গত বছরের নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে।

গাজার এই ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, বাস্তবে থেমে নেই ইসরায়েলি আগ্রাসন। বরং প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানবতা।