বিয়ানীবাজারের বিদ্যাপীঠে পরীক্ষা কেন্দ্র, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষবে কী করে?
এম.এ ওমর
| প্রকাশ: ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০১:০০ পিএম
বই পেতে বিলম্ব, দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতায় পড়াশোনার ক্ষতি তো আছেই; আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পাবলিক পরীক্ষা কেন্দ্র হয়ে থাকলে সেই ক্ষতি হচ্ছে আরও দীর্ঘায়িত।
বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ক্ষতি সাধারণ প্রবণতা হয়ে দাঁড়ালেও তা উতরানোর কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় স্কুল-কলেজকে কেন্দ্র বানিয়ে এসব পাবলিক পরীক্ষা যখন চলে, একই সময়ে বাকি স্কুল-কলেজে চলে স্বাভাবিক পাঠদান।
ফলে এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফারাক তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্র হওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট-কোচিং নির্ভরতা অনেক বেশি।
বিয়ানীবাজার পৌরশহরের প্রধানতম পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক অভিভাবক সালমা বেগম বলেন, “আমার মেয়ের স্কুলে পরীক্ষা চলেছে। ফলে পরীক্ষার দিন ওদের সংক্ষিপ্তভাবে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দিনে ক্লাস চলেছে পুরো। অন্যদিকে যেসব স্কুলে পরীক্ষার সিট পড়েনি, সেসব স্কুল পুরোদমে ক্লাস চলছে।”
“চলতি বছর বই পেতে অনেকটাই দেরি হয়েছে, ফলে বাচ্চারা বেশিরভাগই পিছিয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষার সময় যেসব বাচ্চাদের অর্ধেক ক্লাস চলছে তারা পিছিয়ে পড়ছে, যাদের পুরোদমে ক্লাস চলছে তাদের থেকে”-বলেন তিনি।
খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যা নিকেতনের অভিবাবক ইকবাল হোসেন বলেন, “গত এসএসসি পরীক্ষার সময় এ বিদ্যালয়ে অফ-ডেতে পাঠদান হয়েছে। কিন্তু বই পেতে তিন মাস দেরি হয়েছে। তাই সিলেবাস শেষ করতে বাচ্চারা হিমশিম খাচ্ছে। বইটা একটু আগে পেলে ভালো হত।”
শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ১৮৫ দিন এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কলেজগুলোতে ১৯০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানকে এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বানানো হয়েছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের সুযোগ আরও কম।
এবার বছরের শুরুতে বই পেতে দেরি হয়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীদের। এরপর রোজা, দুই ঈদের ছুটি ছিল সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই। এর মধ্যে দায়সারা প্রস্তুতি নিয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় বসে ২৪ জুন থেকে। আর চলতি বছর যে শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন, তাদের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয় ২৬ জুন থেকে।
একইদিন শুরু হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা, তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১০ অগাস্ট পর্যন্ত। ফলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত ক্লাস ব্যাহত হবে।
বিয়ানীবাজার উপজেলার মধ্যে পরীক্ষার কারণে পাঠদানে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বিয়ানীবাজার বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজসহ আরোও ২-৩টি প্রতিষ্টান। জানতে চাইলে খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালিক বলেন, “পরীক্ষা যে দিনগুলোতে নেই, সে দিনগুলোতে ক্লাস চালিয়েছি।
পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, পুরো শিক্ষাবর্ষজুড়ে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনে সম্প্রতি সুপারিশ করছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খালি জমিতে বা সরকারি জমিতে এ কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটির তথ্য, বক্তব্য ও সকল দায়-দায়িত্ব লেখকের। এর জন্য সম্পাদক দায়ী থাকবেনা