কাশ্মীর হামলায় অভিযুক্ত গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
কাশ্মীর হামলায় অভিযুক্ত গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাম অঞ্চলে চালানো রক্তক্ষয়ী হামলার জেরে পাকিস্তানভিত্তিক একটি চরমপন্থী গোষ্ঠীকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে জানান, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের সংগঠনটিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে মার্কো রুবিও বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কাশ্মীর হামলার বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের অংশ। একইসঙ্গে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এবং ফরেন পলিসি পত্রিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

টিআরএফের জন্ম ২০১৯ সালে হলেও এটি শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে দিল্লিভিত্তিক ‘সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল’ জানায়, এটি লস্কর-ই-তইবা নামক কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের একটি শাখা এবং প্রক্সি সংগঠন হিসেবে কাজ করে। লস্কর-ই-তইবা ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলাসহ একাধিক ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী।

চলতি বছরের ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সংঘটিত এক হামলায় ২৬ জন নিরীহ ভারতীয় নিহত হন। ওই হামলার দায় টিআরএফ স্বীকার করলেও পরে এক বিবৃতিতে তা অস্বীকার করে। হামলার পর থেকেই ভারত সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহল টিআরএফকে দায়ী করে আসছিল। এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেই দায়েরই প্রকারান্তরে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।

ফরেন পলিসির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণা কাশ্মীর হামলা নিয়ে তাদের উদ্বেগ এবং লস্কর-ই-তইবার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা। তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠতেও ভূমিকা রাখবে।

এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটেছে এই ঘোষণার মাধ্যমে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে মার্কিন সিদ্ধান্তকে "উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি" বলে অভিহিত করে।

তবে পাকিস্তানের অবস্থান ভিন্ন। ইসলামাবাদ টিআরএফের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, টিআরএফের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়। চীন ও পাকিস্তানের আপত্তির কারণে জাতিসংঘের এক প্রস্তাবে টিআরএফের নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি বলেও বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন প্রশাসন বর্তমানে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সঙ্গে জোট দৃঢ় করার কৌশল গ্রহণ করেছে। ফলে, পাকিস্তানকে পাশে রেখেও ভারতকেন্দ্রিক সুরক্ষা নীতির দিকেই ঝুঁকছে ওয়াশিংটন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে