কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে শহিদ সাগর আহমেদের (২১) মৃত্যুর এক বছর র্পূণ হলো আজ শনিবার ১৯ জুলাই। তবে এই এক বছর সময় থেমে আছে সাগরের বাবা-মার জন্য। একমাত্র পুত্রসন্তানকে হারিয়ে তাঁরাা গভীর শোক আর অসীম শূণ্যতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সাগর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্টবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত বছরের এই দিনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে মিরপুর গোলচত্বরে পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি।
সাগরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (১৮ জুলাই) বাদ জুম্মা নিজ বাড়িতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন তাঁর পরিবার। প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার সাগরের বাড়ীতে গিয়ে তাঁর বাবা-মার খোঁজ-খবর নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে শহীদ সাগরের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও জিয়ারত করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারিফ উল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারি কমিশনান (ভূমি) এহসানুল হক শিপন, ওসি জামাল উদ্দিন, নারুয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো: আকিদুজ্জামান সেলিমসহ সাগরের বাবা, স্বজন ও স্থানীয়রা।
শুক্রবার সাগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একটি বছর পার হলেও বাড়িতে চলছে মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। এখনো স্বজনের কাছে ছেলেকে নিয়ে নিজের ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন হাতড়ে ডুকরে কাঁদছেন। মা গোলাপী বেগম এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। সব সময় ছেলের জন্য আনমনা থাকেন। সাগরের ছোট বোন নুশমী এবারের চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। সেও ভাইয়ের জন্য সব সময় কান্নাকাটি করছেন।
সাগরের চাচা মুনছুর আলী ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: আসাদুজ্জামান জানান, গত ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাগর তার বাবাকে ফোন করেন। সবার খোঁজখবর নিয়ে বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে বলেন। স্থানীয় নারুয়া বাজারে গিয়ে আধাঘন্টা বাদেই টাকা দেন তার বাবা। টাকা পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হতে কল দেন; কিন্তু রিসিভ হয় না। একটার পর একটা কল তিনি দিতেই থাকেন। মিনিট দশেক পর একবার রিসিভ হলে অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন জানান, সাগর পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। পরে সাগরের লাশ এনে পরের দিন ২০ জুলাই গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
কাঁদতে কাঁদতে সাগরের মা গোলাপী বেগম বলেন, সাগর শুধু আমাদের ছেলে ছিলনা, সে ছিল আমাদের ভরসা- ভবিষ্যৎ। গত একটা বছর সাগরকে ছাড়া আমাদের কিভাবে দিন কেটেছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা জানেন। এই একটা বছর আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে মরছি। ওর হাসি ওর কথাগুলো এখন স্মৃতি। চারিদিক শূধু শূণ্যতা।
ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাগরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মাঠে কাজ করা দেখে সাগর প্রায়ই বলত- বাবা, আর ক’টা দিন অপেক্ষা করো। তোমাকে আমি আর রোদে পুড়তে দেব না। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার ছেলে তো কোনো অপরাধ করেনি। শুধু সত্যে ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। আমার বুকের মানিক যেন পরপাওে ভালো থাকে সেই দোয়া আপনারা করবেন। সাগরের জন্য আমাদের সব কিছু থমকে গিয়েছে। প্রতিটা দিন আমাদের জন্য অভিশপ্ত।
সাগর হত্যার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে মামলার বাদি সাগরের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম জানান, মামলাটি বর্তমান ট্রাইবুনালে রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের মামলা যে গতিতে চলছে সাগরের মামলাও একই গতিতে চলছে। এই মামলায় প্রায় ৩০ জনের মতো গ্রেফতার হয়েছ বলেও তিনি জানান।