ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ ঘিরে শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ঢাকামুখী মিছিল ও সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের আসা-যাওয়ার কারণে সড়কে দেখা গেছে অতিরিক্ত চাপ। গণপরিবহন চলাচল কম থাকলেও ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্যভবন, পল্টন, প্রেসক্লাব, বাংলামোটর, মগবাজার, সায়েন্স ল্যাব, চাঁনখারপুল, সাতরাস্তা ও তেজগাঁও এলাকার সড়কে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। বিশেষ করে সমাবেশমুখী সড়কগুলোতে রিকশা ও মিছিলের কারণে যানজট দীর্ঘায়িত হয়। মৎস্যভবন মোড়ে দায়িত্ব পালন করা স্বেচ্ছাসেবক মো. ইমরান জানান, শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেই রিকশা ব্যবহার করে সমাবেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাসগুলোকে সমাবেশস্থলের আশপাশে না এনে দূরের বিভিন্ন স্থানে পার্কিং করতে বাধ্য করা হয়। পুলিশ জানায়, পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠসহ বিভিন্ন প্রশস্ত সড়কের পাশে এসব বাস পার্কিং করা হয়েছে। সেখান থেকে নেতাকর্মীরা হেঁটে বা রিকশায় সমাবেশস্থলে যান। এর ফলে ওইসব এলাকায়ও অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়।
ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আজ ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকার ভেতরের যান চলাচল কম থাকলেও, বাইরে থেকে বিপুল সংখ্যক বাস ঢুকেছে। এসব বাস থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাচ্ছেন, এতে স্বাভাবিক যান চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে।”
তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, বিজয়সরণি, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, চিটাগং রোডসহ ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রবেশপথে বেলা ১০টা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে ৬০টি বাস ও মাইক্রোবাসযোগে সমাবেশে অংশ নিতে আসেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সদর থানার ওয়ার্ড সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, তারা সকাল ৭টা থেকেই গাড়ি ছাড়তে শুরু করেন এবং যাত্রাপথেই নাস্তা করেছেন যেন দেরি না হয়।
বাসচালক আব্দুর রহিম জানান, চিটাগং রোডের বড়পা এলাকায় যানজট শুরু হয়, পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তার এক ঘণ্টা লেগে যায়।
অপরদিকে, জামায়াতের পক্ষ থেকে ঢাকাবাসী ও দেশবাসীর কাছে আগাম ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার শুক্রবার বলেন, “লাখো মানুষের আগমনের কারণে কিছু যানজট ও সাময়িক দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা আগাম ক্ষমা চাইছি।”
এদিন সকালে থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “সমাবেশকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।”
এবারই প্রথম জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এর আগে দলটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের সড়কে সভা-সমাবেশ করত।
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবিতে ৭ দফা উত্থাপন করে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। কেউ এসেছেন শতাধিক কর্মী নিয়ে, কেউবা ১০-১১টি গাড়ি নিয়ে, আবার কেউ গাড়ির অভাবে রিকশা ব্যবহার করেছেন। এ যেন রাজধানীতে একটি ভিন্নধর্মী জনসমুদ্র।