উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তার পানি হু-হু করে বাড়ছে। এতে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, রোববার (২০ জুলাই) থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুধুমাত্র তিস্তা নয়, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীর পানির স্তরও দ্রুত বাড়ছে। আগামী একদিনের মধ্যে এ বৃদ্ধির গতি বজায় থাকলেও তার পরবর্তী দুই দিনে তা স্থিতিশীল হতে পারে।
তিস্তা অববাহিকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়া গেজ স্টেশনে ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার মাত্র ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে নদীর পানিপ্রবাহ আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও কুড়িগ্রামের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বাড়ার পাশাপাশি আশপাশের ধানের ক্ষেত ও বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুর ইসলাম জানান, রোববার সকাল থেকে টানা বৃষ্টির পর উজান থেকেও পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। ডাউয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, কয়েকটি ওয়ার্ডের মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। যদি পানি আরও বাড়ে, ত্রাণ সহায়তা জরুরি হয়ে পড়বে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, “তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি স্বল্পমেয়াদে প্লাবিত হতে পারে।”
এছাড়া ডালিয়া পয়েন্টে রবিবার রাত ৮টায় তিস্তার পানি বিপদসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা উদ্বেগজনক। অতিরিক্ত চাপের কারণে কমলা সংকেত জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ব্যারাজের সব গেট খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী।
তিস্তা তীরবর্তী রংপুরের কাউনিয়া, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও লালমনিরহাটের চরাঞ্চলগুলোতে চরবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ধানক্ষেত, সেচ প্রকল্প, রাস্তা এবং বসতভিটা প্লাবিত হওয়ার খবর মিলেছে।
বন্যা হলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, যাতায়াতে বিঘ্ন এবং খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।