মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় অবিবাহিত তরুণী, টাকা যায় জামাতার মোবাইলে

এফএনএস (মোরশেদ-উল-আলম; চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ২১ জুলাই, ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় অবিবাহিত তরুণী, টাকা যায় জামাতার মোবাইলে

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হয়েছে এক অবিবাহিত তরুণীর নাম। অথচ ওই তরুণী নিজেই জানেন না তার নামে এমন ভাতা চালু রয়েছে। স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্যের জামাতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে এ ভাতার টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মোছা. নুরনাহার বেগমের বিরুদ্ধে। তাঁর সুপারিশে ভুয়া তথ্য দিয়ে এক অবিবাহিত তরুণীকে গর্ভবতী দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করা হয়। এরপর তাঁ জামাতার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সেই ভাতার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বিষয়টি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের সাম্প্রতিক যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়েছে। 

জানা গেছে, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের তালেব মেম্বারপাড়া গ্রামের আক্তারিনা আক্তার পিতৃমাতৃহীন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি এক প্রতিবন্ধী ভাইকে দেখভাল করেন। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে (বিনামূল্যে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল) নাম অন্তর্ভুক্ত করতে আবেদন করার পর জানতে পারেন, তাঁর নামে আগে থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু রয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতার আওতায় একজন প্রসূতি মা প্রতিমাসে ৮০৫ টাকা হারে তিন বছর ভাতা পেয়ে থাকেন। আরও জানা গেছে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ওই নারীর ভাতার আবেদন করা হয়। সেখানে স্বামীর নাম দেয়া হয় পায়েল এবং সংযুক্ত করা হয় একটি গর্ভাবস্থার সনদপত্র। অথচ বাস্তবে তাঁর কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক বা মাতৃত্বের সত্যতা পাওয়া যায়নি। ভাতার টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও আক্তারিনার নয়। ফোন করে জানা যায়, ওই নম্বরটি ইউপি সদস্য নুরনাহার বেগমের জামাতার। তিনি দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর নামই আক্তারিনা। তবে যাচাই করে দেখা গেছে, তাঁর স্ত্রীর প্রকৃত নাম সুরাইয়া আক্তার। 

ভুক্তভোগী আক্তারিনা আক্তার বলেন, আমি অবিবাহিত। মাতৃত্ব ভাতার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। 

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুরনাহার বেগম মোবাইল ফোনে বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার মেয়ে অসহায় এবং তার বয়স কম হওয়ায় অন্য জনের এনআইডি দিয়ে মাতৃত্ব ভাতার কার্ড করেছি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফসানা মোস্তারি জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। অবিবাহিত ওই তরুণীর নামে হওয়া মাতৃত্ব ভাতা বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

এ ব্যাপারে খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির নিকট থেকে এ ধরনের কাজ অপ্রত্যাশিত। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে