বিয়ানীবাজারে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে গতি

সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে আশাবাদী নেতাকর্মীরা

এম.এ ওমর | প্রকাশ: ২২ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে আশাবাদী নেতাকর্মীরা
আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার সাড়ে ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার। তবে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সুদিন ফিরে আসে। একই ধারাবাহিকতায় রাজনীতি সচেতন জনপদ বিয়ানীবাজারেও গতি পেয়েছে জামায়াতের রাজনীতি। অনেকটা যুদ্ধের মাঠে ফিরে পাওয়া প্রাণ। রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মাত্রা। বছরের পর বছর নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা হলেও অভ্যুত্থানের পর বাধাহীন ও রাজনৈতিক প্রাণ ফিরে পেয়েছে জামায়াত-এমন মন্তব্য করেছেন বিয়ানীবাজারের অনেকেই।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাধাহীন সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছে বিয়ানীবাজার জামায়াতে ইসলামী। সভা-সমাবেশসহ জনগণের কাছে দলটির ইতিবাচক বার্তাও পৌঁছে দিচ্ছে তারা। নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। চলছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। সিলেট-৬, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নির্বাচনী আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে আশাবাদী তারা। সেলিম উদ্দিন নিজেও ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। প্রতি সপ্তাহে নিজ নির্বাচনী এলাকার বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। তার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বিয়ানীবাজার সফর করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা: শফিকুর রহমান, সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার স্থানীয়ভাবে সভা করেছেন।

ফের আসছেন জামায়াতের আমীর। জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বেআইনিভাবে আমাদের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম, সাংগঠনিক তৎপরতা, দলীয় কাজ, ছোটখাটো সভা-সমাবেশ, বাড়িঘর, অফিস, সবই পতিত স্বৈরাচার নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল বারবার। কিন্তু আমরা ছিলাম সব সময়ই। যতটা অত্যাচার, নির্যাতন উপেক্ষা করে আমরা পেরেছি মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম, সংগঠন সম্প্রসারণ, আমাদের কর্মীবাহিনী, জনশক্তি নেতাকর্মীদের চরিত্র গঠন, দাওয়াতি কাজ, বিগত ১৫ বছর বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি।

এখন ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তিত অবস্থায় এখনো তো সেই স্বৈরশাসক নেই। সব দলই অবাধে সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মসূচি, জনগণের কাছে তার মেসেজ পৌঁছে দেওয়ার স্বাভাবিক একটা পরিবেশ পেয়েছি। জনগণের কাছে আমরা অবাধে যেতে পারছি, মানুষ আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছে। আমাদের এতদিনের তৈরি করা জনশক্তি, কর্মী মাঠে ময়দানে কার্যক্রম করছে। কাজ আমাদের সবসময়ই ছিল, এখন হয়তো পরিবেশ বাধাহীন হওয়ার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমটা সবার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে।’ গত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় সবক’টি ব্যবসা প্রতিষ্টান ভাংচুরের কবলে পড়ে। পৌরশহরের নিউ মার্কেটে অবস্থিত জামায়াতের অফিস তালাবদ্ধ ছিল বছরের পর বছর। এখন সেই অফিসেই কার্যক্রম চলছে দলটির।

হাসিনা সরকারের সময়ে এত কঠিন পরিস্থিতিতেও একাধিক ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা জামায়াতের আমীর ফয়জুল ইসলামকে কারচুপির মাধ্যমে হারিয়ে দেয়া হয় বলে অনেকেই তখন অভিযোগ করেন। আগামীতে উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিয়ানীবাজার পৌর জামায়াতে ইসলামের আমীর কাজী জমির হোসাইন বলেন, জামায়াত কখনোই শেষ হয়ে যায়নি, আমরা শেষ হওয়ার মতো দল নয়। শেখ হাসিনা সরকারের দমন-পীড়ন, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, পুলিশি হয়রানীসহ সব ধরনের নির্যাতন করে আমাদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছিলো। প্রকাশ্যে না হলেও আমরা আমাদের সবকয়টি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। জেল-জুলুম নির্যাতন শিকার করে আমাদের নেতাকর্মীরা জামায়াতের আদর্শ ছেড়ে যাননি। তিনি বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ অবমুক্ত হয়েছেন। বাক্ স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন। দীর্ঘদিন পর মুক্তমনে রাজপথে ফিরতে পেরে খুব খুশি নেতাকর্মীরা।

এই প্রতিবেদনটির তথ্য, বক্তব্য ও সকল দায়-দায়িত্ব লেখকের। এর জন্য সম্পাদক দায়ী থাকবেনা

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে