থমকে গেছে জুলাই যোদ্ধা রতনের সংসার জীবন

এফএনএস (ইমরান হোসাইন রুবেল; সারিয়াকান্দি, বগুড়া) : | প্রকাশ: ২৩ জুলাই, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
থমকে গেছে জুলাই যোদ্ধা রতনের সংসার জীবন

গত জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পা হারিয়েছেন সারিয়াকান্দির জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা শফিকুল ইসলাম রতন। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির পা হারানোয় থমকে গেছে তার পরিবারের উপার্জন। এই শফিকুল ইসলাম রতন বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকার ধাপ গ্রামের মৃত ইলিয়াস উদ্দিন আকন্দের ছেলে। গত তিন বার যমুনা গর্ভে জমি জমা, ভিটে মাটি হারিয়ে গাজিপুরে গিয়ে অটোরিকশা রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন।

১৬ জুলাই সকালে শহীদ আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর সারাদেশে যখন আন্দোলন বেগবান হয়, ঠিক সেদিন বিকালে মিছিলে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম রতন। বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে গাজীপুর শফিপুর এলাকায় যখন মিছিল বের করা হয় তখন পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। সে দিন পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলি লেগে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এর পর  পুলিশের গুলি থেকে বাঁচতে সবার সাথে অটো চালক শফিকুল ইসলাম রতনও দিকবিদিক দৌড় দেন। কিন্তু পুলিশ তখন তাকে পিছন থেকে গুলি করে। ফলে একটি গুলি রতনের ডানপায়ে বিদ্ধ হয়। গুলি বিদ্ধ অবস্থায় পা নিয়ে দৌড়েনোর ফলে রাস্তার পার্শ্বে থাকা একটি লোহার এঙ্গেলও তার ডান হাতে  ঢ়ুকে যায়। এরপর শহীদ তাজ উদ্দিন হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে কোনও চিকিৎসা না পাওয়ায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে সুস্থ হলে তাকে সারিয়াকান্দি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কিছুদিন পরে পুনরায় অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার পায়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পরে। পরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার ডান পা কেটে ফেলতে বাধ্য হয়। জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যান জুলাই যোদ্ধা শফিকুল ইসলাম রতন।

এর পর ঢাকায় ব্রাক ব্যাংকের সহায়তায় তিনি একটি কৃত্রিম পা পেয়েছেন। গত ২৭ সে রমজান ১ লক্ষ টাকাও পেয়েছেন তিনি। তবে চিকিৎসা ও সংসার ভরনপোষনে জন্য ইতোমধ্যই পুরো টাকা খরচ হয়েছে। বড় মেয়ে সুস্মিতা আক্তার বগুড়া সৈয়দ আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার ছোট মেয়ে মরিয়ম আক্তার সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পরে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পা হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। নিজের পরিবারের ভরনপোষণ চালাতে তিনি তার বড় মেয়ের সুস্মিতার জন্য সরকারের কাছে একটি চাকুরী দাবি করছেন। দেশের মানুষ ভালো থাকলেই পা হারানো স্বার্থক হবে বলে শফিকুল ইসলাম রতন মনে করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে