সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত

ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত এবং একজন আহত হওয়ার ঘটনায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে সীমান্তের বাসপদুয়া এলাকায় এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজনের মরদেহ এখনও ভারতের হাসপাতালে রয়েছে, অপরজন মারা যান ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

নিহতরা হলেন পরশুরাম উপজেলার বাসপদুয়া গ্রামের গাছি মিয়ার ছেলে লিটন (৩২) এবং একই এলাকার ইউছুফ মিয়ার ছেলে মিল্লাত হোসেন (২১)। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আফছার (৩০), যিনি ওই এলাকার মৃত এয়ার আহম্মদের ছেলে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ফেনী ব্যাটালিয়নের (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন শুক্রবার (২৫ জুলাই) সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থল ছিল গুথুমা বিওপির আওতাধীন ২১৬৪/৩-এস নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে। তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে একজন নিহতের কথা জানতে পারি। পরে নিশ্চিত হই যে লিটন নামের আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এবং তাঁকে বিএসএফ ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে।”

জানা গেছে, রাতে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সীমান্তে গিয়েছিলেন লিটন, মিল্লাত ও আফছার। এ সময় বিএসএফের আমজাদনগর ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে তিনজনই গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা গুলির শব্দ শুনে মিল্লাত ও আফছারকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মিল্লাতের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লিটন সীমান্ত পার হয়ে পড়ে থাকলে তাকে বিএসএফ উদ্ধার করে ভারতের বিলোনিয়া হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিজিবির পক্ষ থেকে এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএসএফ জানিয়েছে, মরদেহ হস্তান্তরের জন্য তাদের কিছু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া রয়েছে এবং তা শেষ করে মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। দুই পক্ষের মধ্যে শনিবার (২৬ জুলাই) পুনরায় পতাকা বৈঠকের কথা রয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত পিলারের কাছে ওই তিনজন ছিলেন এবং বিএসএফ সরাসরি তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বিজিবি বলছে, এত রাতে তারা কেন সীমান্তে ছিলেন এবং কী প্রেক্ষাপটে সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন— সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

অন্যদিকে, বিএসএফের দাবি, ওই এলাকায় দুই দেশের কিছু চোরাকারবারি একত্রিত হয়ে মালামাল পাচারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদের সতর্ক করার পরও আক্রমণের চেষ্টা করলে বিএসএফ আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়। তারা ঘটনাস্থল থেকে কিছু চোরাচালান দ্রব্য জব্দ করার কথাও জানিয়েছে।

বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে কোনওভাবেই গুলির ঘটনা কাম্য নয়। এর শান্তিপূর্ণ সমাধানে কূটনৈতিকভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে