মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সরিষার ফুল হলুদে মাখানো মাঠে দেখা দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত। জমিতে হাল চাষ ছাড়াই আগাম সরিষা চাষ করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নতুন উদ্যম। দুই ফসলি জমিতে বিনা চাষে সরিষা রোপন করে কৃষকরা তিন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন এ উপজেলার অনেক কৃষক। সরেজমিনে, হরগজ ইউনিয়নের নয়াপাড়া গিয়ে দেখা যায়, আরও দুই সপ্তাহ আগে ধান কাটা শেষ হওয়া জমিতে সরিষার চারা গজিয়ে হলুদ মুকুলে ছেয়ে গেছে। অনেক জমিতে এখনও সবুজ পাতা থাকলেও কিছু জমিতে হলুদ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। মৌমাছিরাও গুঞ্জন শুরু করেছে এসব সরিষা ক্ষেতে। এই চাষ পদ্ধতিতে সময় ও খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি ফলনের মানও ভালো হচ্ছে। চরপাড়া গ্রামের চাষি দানেজ আলী বলেন, গত বছর দুই বিঘা জমিতে নিজ উদ্যোগে বিনা চাষে সরিষা চাষ করেছিলেন। এতে বাম্পার ফলন হওয়ায় তিনি বেশ উৎসাহিত হন। এবার তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বারী-১৭ জাতের সরিষা রোপন করেছেন। তিনি বলেন, হাল চাষের খরচ নেই, আর ধানের সাথে সরিষা রোপন করায় পাখিও ক্ষতি করতে পারে না। ফলন দেখে মনে হচ্ছে এবারও বাম্পার হবে।” কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, কেউ নিজে থেকে, কেউ অন্যের চাষ দেখে উদ্যোগী হয়েছেন, কেউ কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের উদ্ধুকরণে, শুরু করেছেন বিনা চাষে সরিষা চাষ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সরিষা চাষে এবার বাম্পার ফলন পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। বিনা চাষে সরিষা চাষী মুনছের বলেন, হাল চাষের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হয় না। অপর দিকে জমিতে ধান থাকা অবস্থায় সরিষা রোপন করলে পাখিতেও নষ্ট করতে পারে না। ফসলও আগাম ঘরে তোলা যায়। তাই গত বছরে ফলনে খুশি হয়ে এবারও বিনা চাষে সরিষা রোপন করেছেন তিনি। গর্জনা গ্রামের আবুল হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, বিনা চাষে সরিষা চাষে বিঘাপ্রতি এক কেজি বীজ ব্যবহার করা হয়। চারা গজানোর সাত দিন পর প্রয়োজনীয় সার যেমন ডিএপি, জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম ও ইউরিয়া সার দিয়েছি। তাছাড়া রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক দিব। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “এই বছর উপজেলায় ২,৯৮৫ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হেক্টর জমিতে বিনা চাষে সরিষা রোপণ করা হয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।” কৃষি অফিসের ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, বিনা চাষে সরিষা চাষের প্রধান সুবিধা হলো জমিতে হাল চাষের খরচ বাঁচে, এবং ধান কাটার পর সরিষা রোপণ করলে সময়মতো ফসল ঘরে তোলা সম্ভব হয়। সরিষার গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরাও এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সাটুরিয়ার কৃষকরা বিনা চাষে সরিষা চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সঠিক আবহাওয়া ও পরিচর্যার মাধ্যমে এই পদ্ধতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।