নাটোরের বড়াইগ্রামে ৭ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে ১০টি দোকানে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার আহম্মেদপুর বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে, বিকালে নাটোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমীর ড. মীর নুরুল ইসলাম বলেছেন, মুলত জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে দোকানপাটে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি দলীয় কোন বিষয় নয়। এ ঘটনায় নেতাকর্মীদের ধৈর্য্যচ্যুতি থেকে তালা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে চাঁদা দাবির মত কোন ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন- উপজেলার আহম্মেদপুর গ্রামের মৃত বন্দে আলী মিয়ার ছেলে মুজিবুর রহমান (৬৫), তার ছেলে জোয়াড়ী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি রুহুল আমিন (৪৫), তার ভাই ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পাদক হায়দার আলী (৪৮) ও জামায়াত কর্মী আজিমউদ্দিন (৪০)।
স্থানীয়রা জানান, আহম্মেদপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের সাথে প্রতিপক্ষ নওপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, কোরবান আলী, শাহ আলম ও মোতালেব হোসেনের ৭ শতাংশ জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ ঘটনায় আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। এদিকে, বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয়ভাবেও একাধিক সালিশ বৈঠক হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে সালিশ বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহুর্তে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুজিবুর রহমানের ছেলেরা বিবাদমান জমিতে থাকা ১০ টি দোকানে তালা মেরে দেন। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনকে আটক করেন এবং তালা খুলে দেন।
নওপাড়া গ্রামের কোরবান আলী বলেন, ‘আমরা ক্রয় সুত্রে এ জমির মালিক। জমি কিনে সেখানে আমরা দোকান করেছি। কিন্তু তারা এ জমি তাদের বলে দাবি করে দোকানে তালা দিয়েছে। পরে বিকেলে সেনাবাহিনী ও বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অপর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দোকানের দখল না পেয়ে তারা আমাদের কাছে মাসিক ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা চেয়েছে। আমরা তা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা দোকানে তালা দিয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তারের আগে জামায়াত নেতা রুহুল আমিন বলেন, ‘ওই জমি আমাদের। তারা ৩৩ শতাংশ জমির মধ্যে ২২ শতক জমি কিনেছে, ৪ শতাংশ রাস্তায় চলে গেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা আমাদের অবশিষ্ঠ ৭ শতাংশসহ পুরো জমি দখল করে রেখেছেন। আমাদের অংশের জমি ছাড়তে বললেও তারা ছাড়ছেন না। আমরা জমি না ছাড়লে দোকানের ভাড়ার টাকা দিতে বলেছিলাম, চাঁদা নয়। এ বিষয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। তবে এভাবে দোকানে তালা দেওয়া আমাদের ঠিক হয়নি।’
বিএনপি কর্মী হায়দার আলী বলেন, ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে জমির সমস্যাটি সমাধানের জন্য স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন নেতার নেতৃত্ব একটি কমিটি করা হয়। কিন্তু তারা (দোকানিরা) এ কমিটির কথাও মানেন না। তাই আমরা আমাদের জমি দখল করেছি।’
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে দোকানে তালা দেয়া ও চাঁদা দাবির অভিযোগে থানায় মামলা করেছেন। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।