নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ
| আপডেট: ১ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম | প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫৮ এএম
নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ

কয়েক দফা ব্যর্থ হওয়ার পর রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নে আবারো নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন উদ্যোগে ঢাকার সব বাস চলবে একটি কোম্পানির আওতায় এবং নির্দিষ্ট রুট ধরে চলবে। মূলত বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এতোদিন এই উদ্যোগের প্রত্যাশিত সফলতা আসেনি। পরিবহন মালিকদের অসহযোগিতা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে উদ্যোগটি তেমন সফলতা পায়নি। তবে দেশে রাজনৈতিক পটপরিপর্তনের পর নতুন করে আবারো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন ডিটিসিএ ওই প্রকল্প সফল করতে চায়। ডিটিসিএ এবং পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০০৪ সালে রাজধানীর বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে সর্বপ্রথম ঢাকার জন্য করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’ বা বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি চালুর পরামর্শ দেয়া হয়। আর তা বাস্তবায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ২০১৬ সালে প্রথম উদ্যোগ নেন। তিনি ঢাকার শতাধিক বাস রুট বাদ দিয়ে কেবল ৫টি রুটে ভাগ করে ৫ রঙের বাস চালানোর পরিকল্পনা নেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সভাপতি করে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি করা হয়। আর ওই বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৪২টি রুটের ২২টি কোম্পানির অধীনে ৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাস চালানোর প্রস্তাব দেয় ডিটিসিএ। কয়েক দফা বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে সভা করার পর ২০২১ সালে তিনটি রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০টি বাস নিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ চালু হয়। পরে বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়। কিন্তু ঢাকা নগর পরিবহনের পাশাপাশি একই রুটে অন্য কোম্পানির বাস চলতে থাকায় কিছুদিন চলার পর নগর পরিবহনের এই বাসগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র জানায়, চলতি বছরের নভেম্বরে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৯তম সভা শেষে বাধ্যতামূলকভাবে ঢাকার সব বাস কোম্পানি বিলুপ্ত করে একটি কোম্পানি আওতায় চালানোর কথা জানানো হয়। ঢাকার ৪২টি রুটের কোম্পানিগুলোর বাস নগর পরিবহন নামে করা হবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন যোগ্যতায় বিবেচনা করে নির্বাচন করা হবে। ইতোমধ্যে ঢাকায় চলাচল করা বাস কোম্পানিগুলোকে ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় পরিচালনার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। আর পুরো নভেম্বরজুড়ে এই আবেদন গ্রহণ করা হয়। যারা আবেদন করবে না তাদের বাস চলতে দেয়া হবে না। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৭০টি বাস কোম্পানি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। বর্তমানে সেগুলোর মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। পাশাপাশি রুট পুর্নবিন্যাস ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়েও নানা ছক করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, রাজধানীতে গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে রুট পারমিটবিহীন ও রুট ভায়োলেশনকারী বাসগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে চালক ও সহায়কদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া ডিটিসিএর প্রস্তুত করা প্রস্তাবনার সমন্বয়ে অচল রুট বাতিল ও নতুন রুটগুলোর পরিকল্পনা প্রয়োজনবোধে পরিমার্জন করা হবে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মাধ্যমে ১১০টিরও বেশি বাস স্টপ তৈরি করা হয়েছে। আর ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস মালিকরাও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, ঢাকা নগর পরিবহন নামে শহরের গণপরিবহন পরিচিত হবে। শহরের বাইরের সঙ্গে সংযোগকারী পরিবহনের নাম হবে শহরতলী পরিবহন। ৩৪টি রুট নগরের ও ৮টি রুট শহরতলীর। কোম্পানির নামে বাস রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, ব্যক্তি নামে আর কোরো বাসের রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট দেয়া হবে না। কাউন্টার ও টিকিট ব্যতীত কোনো বাস চলবে না। টিকিটের সঙ্গে পরবর্তীতে র‌্যাপিড পাস ব্যবহারের সুযোগ রাখা হবে। তাছাড়া নতুন করে বাস মেরামত করা হবে। বাসগুলোতে ধাপে ধাপে স্বয়ংক্রিয় দরজা লাগানো হবে, আসন বিন্যাস করা হবে এবং সিঁড়ির ধাপ বাড়বে। এছাড়াও ক্যামেরা বসবে, ড্যাশক্যাম থাকবে। স্টপেজেও ক্যামেরা রাখা হবে। ড্রাইভার ও হেলফার নিয়োগ হবে কোম্পানি থেকে, তারা কোনো ভাড়া আদায় করবে না। এদিকে এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম জানান, বিগত ১৫ বছর সড়ক পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখল, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে মালিক সমিতি, বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি, বাস টার্মিনাল এবং শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে চাঁদাবাজি করা হয়েছে। এই ধারা থেকে বাস মালিকরা বেরিয়ে আসতে চায়। আমরা চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। নাগরবাসীর যেন স্বস্তিতে চলাচল করতে পারে এবং শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পায়, সেজন্য আমরা সব ধরনের সহয়তা করতে রাজি। অন্যদিকে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম জানান, ১৭০টি বাস কোম্পানি ঢাকা নগর পরিবহনের আওতায় আসার জন্য আবেদন জানিয়েছে। মোটামুটি ঢাকার ১৭০টি কোম্পানিই রাজধানীজুড়ে বাস পরিচালনা করে। ওই আবেদনগুলোই এখন যাচাই করা হচ্ছে। এর মাঝে যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে তারা থাকবে। এছাড়া ঢাকায় বিদ্যমান বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৩৮৮টি রুটকে সমন্বয় করে ৪০ থেকে ৪৫টি রুটে পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। এই রুটগুলোয় গণপরিবহনের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতে কয়েক মাস সময় লাগবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে