বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু, ১৩ মাস পর হত্যা মামলা

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৪:২২ পিএম
বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু, ১৩ মাস পর হত্যা মামলা

২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রীক শক্তি প্রদর্শনের সময় বোমা বিস্ফোরণে কামাল বেপারী নামের একজন নিহত হওয়ার ১৩ মাস পর হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন স্বজনরা। ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই ও বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারীদের ভয়ে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী।

আদালতের নির্দেশে মামলাটি বরিশালের গৌরনদী মডেল থানায় এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে তদন্তের কাজও শুরু হয়েছে জানিয়ে বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম জানান, মামলায় সাতজনকে নামধারী এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। বোমা বিস্ফোরনে আহত ও পরবর্তীতে কুপিয়ে জখমের পর টানা নয়দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা কামাল বেপারী মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের পূর্ব তয়কা গ্রামের মৃত সেলিম বেপারীর ছেলে।

গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামে বোমার আঘাতে নিহত হওয়ার আগে তিনি (কামাল) ঢাকার সোয়ারীঘাট এলাকার কসাইয়ের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। মামলার বাদী মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার খুনের চর এলাকার মজিবর বালীর ছেলে দুলাল বালী নিহত কামালের মামাতো ভাই।

মামলায় যাদের নামোল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন-মুলাদী উপজেলার চিঠির চর গ্রামের মালেক শিকদারের ছেলে আব্বাস শিকদার, বরিশাল বিমানবন্দর থানার করমজা গ্রামের মৃত লতিফ হাওলাদারের ছেলে নুরুল ইসলাম, মুলাদীর সাহেবেরচর গ্রামের মৃত মালেক বেপারীর ছেলে আবু হানিফ, চিঠির চর গ্রামের মৃত জোনাবালী শিকদারের ছেলে শাহিন শিকদার ও আনু শিকদার, খুনেরচর গ্রামের মৃত রশিদ বালীর ছেলে ওহিদুল বালী, তয়কা গ্রামের আমিন আকনের ছেলে লেলিন আকন।

মামলার প্রধান আসামি আব্বাস শিকদারের বড় ভাই আলতাফ হোসেন ছিলেন পতিত সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো ভাই বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের ওই সময়কার সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর গানম্যান।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রধান সহযোগী গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র (বর্তমানে জেলহাজতে থাকা) হারিছুর রহমান হারিছ ছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার পক্ষে শক্তি প্রদর্শনের জন্য ভাড়ায় গৌরনদীতে লোকজন জড়ো করা হয়।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ওইসময় মামলার আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন গৌরনদীর ধানডোবা গ্রামের ইউপি সদস্য শিমুল সরদারের বাড়িতে যায়। সেখানে কামাল বেপারীকেও কৌশলে ডেকে নেওয়া হয় এবং ২৩ জুন রাতে সবাই ধানডোবা গ্রামের ওয়াদুদ সরদারের পানের বরজে যায়। পরে সেখানে মামলার প্রধান আসামি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর গানম্যান আলতাফ হোসেনের ছোট ভাই আব্বাস শিকদারের নির্দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। ওই বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি নিহত এবং কামাল বেপারী গুরুত্বর আহত হন।

সে সময় মামলার আসামিরা অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ গুম করে ফেলে এবং কামাল বেপারীকে হাতে ও পায়ে কুপিয়ে আরও জখম করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মুমুর্ষ অবস্থায় কামাল বেপারীকে রেখে আসামিরা পালিয়ে যায়। তবে আহতের মুখ থেকে বাদী ঘটনা সম্পর্কে অবগত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৪ সালের ২ জুলাই কামাল বেপারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

মামলার বাদী দুলাল বালী অভিযোগ করে বলেন, জীবিত অবস্থায় কামাল বেপারী ও সাক্ষীদের কাছ থেকে ঘটনা শুনে তৎকালীন সময়ে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ ঘটনা ভিন্নখাতে নিয়ে আমাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার লোক হওয়ায় পরবর্তীতে তারা মামলা দেয়ারও সাহস পাচ্ছিলেন না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি (দুলাল) গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে তাদের আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়ার পর তিনি আদালতে মামলাটি দাখিল করেন।

সার্বিক বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) শারমিন সুলতানা রাখি বলেন, আদালতের নির্দেশে গত ২১ জুলাই মামলাটি থানায় এজাহারভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে ঘটনাটি প্রায় ১৩ মাস পূর্বের হওয়ায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ভালো কিছু বের হবে।

অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোমা বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিহত ব্যক্তি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার শিতলতারা এলাকার কাঞ্চন মাঝির ছেলে জাহাঙ্গীর মাঝি। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সময় গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হারিছুর রহমান হারিছ নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র দখল করতে বোমা তৈরির জন্য উল্লেখিতদের ভাড়ায় এনেছিলেন। আর বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরনে তাদের মৃত্যু হয়েছে। সেসময় ঘটনার পরপরই পুরো বিষয়টি ধামাচাঁপা দেওয়ার জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হারিছুর রহমানের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে ওইসময়ের চাঞ্চল্যকর এ বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে