বন্ড ইস্যুতে প্রতারণা ও অনিয়ম

সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যু সংক্রান্ত অনিয়ম, তথ্য গোপন ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে তাকে আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিএসইসির ৯৬৫তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।

বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, ‘শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ এবং ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টিবল অর রিডিমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক’ নামে দুটি বন্ড ইস্যুতে নানা ধরনের গুরুতর অনিয়ম ও প্রতারণা সংঘটিত হয়েছে।

‘শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ ২০২৩ সালের ৪ জুন ১৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যে এবং ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যে অনুমোদন দেওয়া হয়। বন্ডটির আবেদনকারী কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপের পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা। নিবন্ধনের চার দিনের মধ্যে ২৪৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় ভূমি উন্নয়নের জন্য। এ সময়ে আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ডের জামিনদার হলেও ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’—এই স্লোগানে ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করে বিনিয়োগ আহরণ করা হয়। এ সময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সালমান এফ রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তার ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান।

এই অনিয়মের দায়ে শায়ান রহমানকেও ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং তাকেও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুমোদিত ‘বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক’ বন্ডের ক্ষেত্রেও অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে উল্লেখ করে বিএসইসি।

কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিএসইসির সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠান হিসেবেও আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসিকে সতর্ক করা হয়েছে। তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, মো. গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল (এনডিসি), কাওমরুন নাহার আহমেদ এবং স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকেও সতর্ক করা হয়েছে।

এ ছাড়া বন্ড রেটিং প্রতিষ্ঠান এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল)-কে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং সুকুকের নিরীক্ষক এমজে আবেদিন অ্যান্ড কো. চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও গ্রিন ভ্যালিডেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইসিআরএলের বিরুদ্ধেও বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অনিয়মের বিরুদ্ধে বিএসইসি ভবিষ্যতেও কঠোর অবস্থানে থাকবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে