আন্তর্জাতিক পর্যটন বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে এবার বড় সিদ্ধান্ত নিল শ্রীলঙ্কা। ২০২৫ সালের মধ্যে পর্যটন আয়ে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে দেশটি বিশ্বের ৪০টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি সম্পূর্ণ মওকুফ করেছে। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সৌদি আরব, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ইরানসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণবহুল দেশ।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করে অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেৃওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিথা হেরাথ। তাঁর মতে, প্রাথমিকভাবে সরকারের কিছু আর্থিক ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে পর্যটক প্রবাহ বেড়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবে।
এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও জাপানের জন্য ৩০ দিনের বিনামূল্যে পর্যটন ভিসার সুবিধা চালু করে শ্রীলঙ্কা। নতুন ঘোষণার মাধ্যমে আরও ৩৩টি দেশ এতে যুক্ত হলো, যাদের নাগরিকরা এখন থেকে কোনো ফি না দিয়েই শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করতে পারবেন।
সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে থেকে যারা শ্রীলঙ্কা ভ্রমণে যান, তাদের ৫০ থেকে ৬০ মার্কিন ডলার ভিসা ফি দিতে হয়। নতুন নিয়মে এই খরচ সম্পূর্ণভাবে বাদ পড়বে, ফলে ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী হবে পর্যটকদের জন্য।
শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়েছে, চলতি বছর দেশটিতে ৩০ লাখ পর্যটক আকৃষ্ট করে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ ৫০ হাজার পর্যটক সফর করেছিলেন, যেখান থেকে আয় হয়েছিল আনুমানিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন শ্রীলঙ্কায়, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেশি। যদিও জুলাই মাসে ক্যান্ডির ঐতিহাসিক এসালা পেরাহেরা উৎসবকে ঘিরে দেশটি ২ লাখ ৭৭ হাজার পর্যটকের আগমন প্রত্যাশা করেছিল, সেখানে এসেছিল মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার।
বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি ভ্রমণ প্রচারণা শুরু করেছে। গত মার্চে বিভিন্ন দেশের ১২ জন জনপ্রিয় ভ্লগারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাদের মাধ্যমে দেশটির ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
বর্তমানে যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক শ্রীলঙ্কায় যায়, তার মধ্যে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া। সরকার আশা করছে, ভিসা ফি মওকুফের ফলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকেও পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।
পর্যটন বিশ্লেষকদের মতে, এই ভিসা ফি মওকুফ আন্তর্জাতিক পর্যটক টানার একটি কার্যকর উদ্যোগ। তবে তারা এটিও মনে করেন যে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শুধু এই সুবিধা যথেষ্ট নয়; বরং প্রয়োজন আরও সুসংগঠিত পরিকল্পনা, আধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে সক্রিয় প্রচার। সূত্র: স্কিফ্ট