সৈয়দপুরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে ২৬ করাতকল

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ৩১ জুলাই, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
সৈয়দপুরে অনুমোদন ছাড়াই চলছে ২৬ করাতকল

নীলফামারীর সৈয়দপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ৩১টি করাত কল। ওই করাতকলগুলোর মধ্যে মাত্র ৫টির রয়েছে অনুমোদন। বাকি ২৬টি চলছে অবৈধভাবে। ২৬টি করাতকলের কোন প্রকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও লাইসেন্স নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তর,ফায়ার সার্ভিস, পৌরসভা ও বনবিভাগের কোন ছাড়পত্র। ওই সকল করাতকলের মালিক সরকারকে দেয় না কোন প্রকার ভ্যাট ও ট্যাক্স।

রংপুর রোড বাঙ্গালীপুরে মুকুল সমিল নামে এমনি একটি করাতকল সৈয়দপুর বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে ওই করাত কলটির ভাড়াটিয়া মালিক সাইফুল ইসলাম ওরফে ফুলবাবু। অনেকটা প্রশাসনের চোখকে ধুলো দিয়ে তিনি করে আসছেন ব্যবসা। করাত কলটি সকাল থেকে চালু হয়ে চলে রাত অবদি। করাত কলের পাশে রয়েছে বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র। যেখানে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। করাত কলের কাঠের গুঁড়া ও ধুলা বালি বাতাসের সাথে উড়ে আসে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। ওই সময় চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে কাঠের গুঁড়া পড়ে চোখ নষ্টের উপক্রম। ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা এক শিক্ষার্থী বলেন,একটি হাসপাতালের প্রাচীর ঘেষে কিভাবে অবৈধ করাত কল চলে। তিনি ওই করাত কলটি দ্রুত সময়ে বন্ধের দাবি জানান।

এদিকে করাত কলের সামনে রবি ও লাল নামে দুইজনের দুইটি খাবার হোটেল রয়েছে। খাবারের মধ্যেও উড়ে আসে কাঠের গুঁড়া। অপরপাশে করাত কলের সাথে রয়েছে সাজেদা ক্লিনিক, ইউনাইটেড আলটাসনোগ্রাম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এছাড়াও রয়েছে এফ ও এইচ উচ্চ বিদ্যালয় ও সূর্যের হাসি ক্লিনিক।

সৈয়দপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহিবুল ইসলাম মুশকুরী বলেন, সৈয়দপুর উপজেলায় করাত কল রয়েছে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৫টির। ২৬টি করাত কল চলছে অনুমোদন বিহীন। তার মধ্যে বাঙ্গালীপুরে মুকুল স মিলটির কোন অনুমোদন নেই।

নিয়ম অনুযায়ী করাত কলগুলোর বেশীর ভাগের অনুমোদন পাওয়ার যোগ্য নয়। আবার যেগুলোর যোগ্যতা আছে সেগুলোও লাইসেন্স করছে না।   লাইসেন্স না করেই তারা করাতকল ব্যবসা করে আসছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২শ মিটারের মধ্যে করাতকল থাকতে পারবে না। কিন্তু অনেকে তা মানছে না। আমরা বেশ কয়েকবার অবৈধ করাত কলগুলোর বিরুদ্ধে অ্যকশন নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না আসায় তা পারি নেই।

নীলফামারী বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, জেলার ছয় উপজেলায় ২০৬টি করাত কল চলছে। তার মধ্যে নীলফামারী জেলা সদরে ৬৫টি করাতকল । তার মধ্যে ১২টি করাত কলের লাইসেন্স ছিল। বাকিগুলো চলছে অবৈধভাবে। 

২০১৩ সালের পর জেলায় কোনো লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এ ব্যাপারে বারবার নোটিশ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অনেক করাতকল লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য নয়। 

তিনি বলেন,যারা লাইসেন্স ছাড়াই করাতকল চালাচ্ছে তাদের সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমরা অবৈধ করাতকলের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দপ্তরে প্রেরণ করেছি। নির্দেশনা পেলে অবৈধ করাত কল মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর করাত কলের নবায়ন করতে লাগে ৫শ টাকা। ভ্যাট বাবদ লাগে ৩শ টাকা। এত কম পরিমান টাকার অংক হলেও  মালিকরা নবায়ন করছে না।

নীলফামারী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,,করাত কলগুলোর মালিক নিয়ম মেনে চলছে না। যে সকল করাত কলের অনুমোদন নেই সেখানে অভিযান চালানো হবে। বন্ধ করা হবে অবৈধ করাত কলগুলো। সাথে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে মালিকের বিরুদ্ধে। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে