ঢাকায় এক দিনে তিন সমাবেশ ও দুই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যানজটে নাকাল নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৩ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম | প্রকাশ: ৩ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৫৬ এএম
ঢাকায় এক দিনে তিন সমাবেশ ও দুই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যানজটে নাকাল নগরবাসী
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রোববার (৩ আগস্ট) একযোগে রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনটি বৃহৎ সমাবেশ এবং দুইটি জাতীয় পরীক্ষা—এইচএসসি ও বিসিএস—অনুষ্ঠিত হওয়ায় সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে নজিরবিহীন যানজট ও জনদুর্ভোগ। রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, শাহবাগ, বাংলামোটর, শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে যান চলাচলে দেখা গেছে চরম ধীরগতি।

নগরজীবনের স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য এই দিনটিতে ছিল প্রায় বিপর্যস্ত। যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই চরম উদ্বেগের মধ্যে পড়েন। অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগও ছিল নজরকাড়া। অনেককে গণপরিবহনের অভ্যন্তরে ঠেলাঠেলি করে উঠতে দেখা গেছে, কেউ কেউ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পৃথক কর্মসূচির কারণে রাজধানীর তিনটি কেন্দ্রে দিনব্যাপী আয়োজন ছিল জনসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

ছাত্রদলের উদ্যোগে শাহবাগ মোড়ে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আয়োজিত হয় ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ’। এনসিপি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একই সময়ে আয়োজন করে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে জনসমাবেশ। পাশাপাশি সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর ‘জুলাই জাগরণ’ নামে চার দিনব্যাপী সংস্কৃতি উৎসবের তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান চলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এইচএসসি, সমমান ও বিসিএস পরীক্ষার্থী এই দিনে পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে যানজটে আটকে পড়েন। রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রগামী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পরীক্ষার আগে সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছানো নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।

শ্যামলী বাস কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা কারওয়ান বাজারগামী এক যাত্রী শামীম হোসেন বলেন, “গাড়িতে পা রাখার জায়গা নেই। আবার গাড়িতে উঠলেও এই যানজটে কখন পৌঁছাবো বুঝতে পারছি না।”

একজন সিএনজিচালক বলেন, “টেকনিক্যাল সিগন্যাল থেকে শ্যামলী পর্যন্ত আসতেই ৩৫ মিনিট লেগেছে। যেখানে সাধারণত সময় লাগে ১০ মিনিট।”

এই দিন শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চলাচল নিয়ন্ত্রণে আগের দিন শনিবার (২ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। শাহবাগ, শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় বিপুল জনসমাগমের কারণে সরাসরি যান চলাচল সীমিত রাখা হয়।

বিশেষ করে শাহবাগ ক্রসিং পুরোপুরি বন্ধ থাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, কাঁটাবন মোড়, মৎস্যভবন মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং কাকরাইলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানবাহন ডাইভারশনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

যথাসম্ভব শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথগুলো পরিহার করার আহ্বান জানানো হয়। পরীক্ষার্থীদের সময় বাঁচাতে আগেভাগে রওনা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নেওয়া হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। টিএসসি এলাকা, যা দুটি সমাবেশস্থলের মাঝামাঝি, সেখানে নজরদারি ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বসানো হয় একাধিক তল্লাশিচৌকি। নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক নজর রাখে যেন কোনো তৃতীয় পক্ষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, রাজধানীসহ সারা দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে